সরাসরি সম্প্রচার (লাইভ) চলাকালেই বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের রাজশাহী প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরাপার্সন রুবেল ইসলামের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে।
সোমবার রাতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক বুলবুল হাবিব বাদী হয়ে রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক (ইডি) আবদুর রশীদ। অন্য আসামিরা হলেন- ভাণ্ডার রক্ষক (সাময়িক বরখাস্ত) মো. জীবন, অফিসের পিয়ন মো. সেলিম, ইডির ব্যক্তিগত সহকারী নুরুল ইসলাম, আনসার সদস্য মো. এনামুল এবং গাড়িচালক আবদুস সবুর (সাময়িক বরখাস্ত)।
রাজপাড়া থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম মামলা রেকর্ড হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর, ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন ভাঙচুর এবং টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেছেন বুলবুল হাবিব। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হবে।
এর আগে সোমবার সকালে বরেন্দ্র ভবনে হামলার শিকার হন সাংবাদিক বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরাপার্সন রুবেল ইসলাম। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সকাল ৮টায় বিএমডিএ কর্মকর্তারা অফিসে আসছেন না এমন সংবাদ সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছিল এটিএন নিউজে।
লাইভ চলাকালে ৮টা ২০ মিনিটের দিকে অফিসে আসেন বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এরপর তার নির্দেশে কর্মচারীরা লাইভ চলাকালেই বুলবুল হাবিব ও রুবেলকে মারধর শুরু করেন। মারতে মারতে তাদের বরেন্দ্র ভবন থেকে মূল রাস্তায় বের করা হয়। ক্যামেরা ও বুম কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। ক্যামেরা ভেঙে ফেলায় একপর্যায়ে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।
পরে দুই সাংবাদিক চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যান। মারধরের কারণে ক্যামেরাপার্সন রুবেলের একটি কান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সকালেই বরেন্দ্র ভবনের সামনে যান রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকরা। তারা দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্ত করার দাবি জানান।
দুপুরে বিএমডিএ চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান সাংবাদিকদের জানান, প্রধান কার্যালয়ের ভাণ্ডার রক্ষক মো. জীবনকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রিজিয়ন এবং গাড়িচালক আবদুস সবুরকে নওগাঁ রিজিয়নে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে। তবে এই বদলি আদেশে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সাংবাদিকরা। তারা জানিয়ে দেন দোষীদের সাময়িক বরখাস্ত না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
অবশেষে বিএমডিএ এ দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। পরে বিএমডিএ সচিব শরিফ আহমেদ এক অফিস আদেশে ভাণ্ডার রক্ষক মো. জীবন এবং গাড়িচালক আবদুস সবুরকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এদের মধ্যে জীবন বিএমডিএ কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক।
দুপুরে ঘটনাটি ‘অনাকাঙ্খিত’ উল্লেখ করে বিএমডিএ চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার পর তিনি ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন। সে মোতাবেক দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএমডিএ চেয়ারম্যান বলেন, তারা নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারেন না। তদন্ত প্রতিবেদন প্রতিবেদন আসার পর সে অনুযায়ী মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।