সর্বজনীন পেনশন সুবিধার প্রস্তাবে যা কিছু আছে

পেনশনব্যবস্থা চালু হচ্ছে দেশে। আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করা হবে। এর আগেই এ সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান একসঙ্গে প্রণয়ন করা হবে।

সর্বজনীন পেনশন স্ক্রিম শুরু করা যাবে ১৮ বছর থেকে। একজন নাগরিক এ সুবিধা পাবেন জীবিত অবস্থায় ৮০ বছর পর্যন্ত। এ স্কিমে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বয়সভেদে আর্থিক সুবিধার অঙ্কও কম-বেশি হবে।

বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে সাংবাদিকদের ভার্চুয়ালি ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।

পেনশন স্কিমের মৌলিক দিকগুলো তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক ১৮ থেকে ৫০ বছরের সবাই অংশ নিতে পারবেন। তবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়টি আমরা পরে বিবেচনা করব। জাতীয় পরিচয়পত্রের ওপর ভিত্তি করে নাগরিকরা পেনশন হিসাব খুলতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এ পদ্ধতি ঐচ্ছিক থাকবে, পরে বাধ্যতামূলক করা হবে।

একজন নাগরিক এই স্কিমে যুক্ত হয়ে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা একটানা দেওয়ার পর তার মাসিক পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। ফলে চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে।

মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদা নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসীরা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিতে পারবেন। চাঁদা জমা দিতে ব্যর্থ হলে হিসাব সাময়িক বন্ধ থাকবে। পরবর্তী সময়ে জরিমানাসহ বকেয়া দিয়ে হিসাব পুনরায় চালু করতে পারবেন।

পেনশনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ৬০ বছর পূর্তি হলে নির্ধারিত হারে পেনশন আসবে। পেনশনধারীরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। নির্ধারিত চাঁদা দানকারী ৭৫ বছর হওয়ার আগে মারা গেলে সংশ্লিষ্ট অর্থ জমাকারীর নমিনি এই পেনশন পাবেন। সেক্ষেত্রে নমিনি ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, জমাকারীর অবর্তমানে এককালীন টাকা তোলার কোনো সুযোগ থাকবে না। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পেনশনের ৫০ ভাগ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করা যাবে। কোনো জমাকারী ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে যদি মারা যান, তা হলে জমাকৃত অর্থ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

পেনশন কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য ব্যয় সরকার নির্বাহ করবে। কর্তৃপক্ষ বাজেটে নির্ধারিত টাকা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যয় করবেন। এভাবেই আমরা প্রস্তাবনা ঠিক করেছি।

আরও প্রস্তাবনা আসবে এবং সেটি বিবেচিত হবে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে সবাই লাভবান হবে। শেষ বয়সে যখন কেউ দেখার থাকবে না, তখন এ পেনশনব্যবস্থা কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।

একজন গ্রাহক কত টাকা দেবেন এবং তার বিনিময়ে সরকার কত টাকা দেবে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, কত টাকা পাবেন, সেটি পেনশন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে একটি প্রাথমিক খসড়া করা হয়েছে।

সেখানে দেখানো হয়-প্রস্তাবিত ‘সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা’ প্রবর্তন হলে ১৮ বছর থেকে এক হাজার টাকা চাঁদা দেওয়া শুরু করে এবং ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তা চালু থাকে তাহলে ওই ব্যক্তি অবসরের পর ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে ৬৪ হাজার ৭৭৬ টাকা পেনশন পাবেন।

যদি ৩০ বছর বয়সে চাঁদা দেওয়া শুরু করেন এবং ৬০ বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে, তা হলে অবসরের পর প্রতি মাসে ১৮ হাজার ৯০৮ টাকা পেনশন পাবেন।

সাধারণ হিসাবে দেখা গেছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে একজন মানুষ তার সক্ষমতা অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০০, ১০০০, ১৫০০, ২০০০, ২৫০০, ৩০০০, ৩৫০০ ও ৪০০০ টাকা অ্যাকাউন্টে জমা করতে পারবেন।

পেনশন স্কিমে জমা করা অর্থ কোনোভাবেই কোনো পর্যায়ে এককালীন উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তোলা যাবে, যা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।

কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই নিবন্ধিত চাঁদাপ্রদানকারী মারা গেলে জমা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

পেনশন কর্তৃপক্ষের খরচসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয় সরকার বহন করবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিলে জমা অর্থ নির্ধারিত গাইডলাইন অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে এবং সর্বোচ্চ লাভের ব্যবস্থা করবে।

Comments (0)
Add Comment