প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর কত নাটকই না করে করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোটে কারচুপি, ফল মেনে না নেওয়া, মামলা, ভোটের ফল পাল্টে দেওয়ার ঘোষণা-সবই করেছিলেন। এমনটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছিলেন। নিজ সমর্থকদের উস্কে দিয়ে ৬ জানুয়ারি বাইডেনের প্রত্যয়ন ঠেকাতে ক্যাপিটল হিলে কংগ্রেসম্যানদের ওপর হামলাও চালিয়েছেন।
এতকিছু করেও গদি ঠিক রাখতে পারেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউস ছাড়তেই হয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হন। অল্পের জন্য সিনেটে রক্ষা পান।
এসব করে নানা সমালোচনার মুখে কিছুটা চুপচাপ হয়ে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাইডেন শপথ নেওয়ায় তার লম্ফজম্ফ বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষমতা ছাড়ার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফ্লোরিডার মার এ লাগোতে নিজের রিসার্টে অনেকটাই চুপচাপ সময় কাটাচ্ছিলেন। এতে করে অনেকে ধরে নিয়েছিলেন ট্রাম্প রাজনীতি থেকে অবসরে যাবেন। আর রাজনীতি করলেও রিপাবলিকান দলে থাকবেন না। কারণ তার অভিশংসনে অনেক রিপাবলিকান নেতারও সায় ছিলেন। এছাড়া নির্বাচনের ফল ঠেকাতে রিপাবলিকান নেতাদের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট ছিলেন ট্রাম্প। এসব কারণে ট্রাম্পের সক্রিয় রাজনীতি করা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল।
সেই সন্দেহ দূর করে আবারও সরব হলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় রোববার ফ্লোরিডার কনজারভেটিভ সম্মেলনে স্বরুপে হাজির হন তিনি। জানান, ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা।
আমেরিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার মাত্র ৪০ দিনের মাথায় আবার রাজনীতির মঞ্চ গরম করার প্রয়াস নিলেন। হোয়াইট হাউসে আসা নতুন প্রেসিডেন্টের সমালোচনাও করলেন ট্রাম্প নজিরবিহীনভাবে। মাত্র দেড় মাসের মাথায় নতুন প্রশাসনকে ব্যর্থ আখ্যা দেন।
রক্ষণশীলদের এই সম্মেলনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবার গত নির্বাচনে তার জয় হয়েছে বলে দাবি করেন। তার এই বক্তব্যের প্রতি উপস্থিত সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন দেখা যায়। মঞ্চে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘চার বছর আগে যে মহান যাত্রা আমরা শুরু করেছিলাম, তা শেষ হয়ে যায়নি।’
দেশের ভবিষ্যৎ, দলের ভবিষ্যৎ ও আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলার জন্য দাঁড়িয়েছেন বলে ঘোষণা দেন ট্রাম্প। শুরুতেই তিনি বলেন, ‘ফেক নিউজ’ প্রচার করছে যে তিনি দল গঠন করতে চান।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, বাইডেন প্রশাসন কতটা খারাপ করবে। বাইডেন প্রশাসন কতটা বাম দিকে চলে যাবে, তা আমাদের ধারণারও বাইরে।’ ট্রাম্প এ কথা বলার সময় উপস্থিত দর্শক-শ্রোতা ব্যাপকভাবে হাততালি ও স্লোগান দিয়ে তাঁর বক্তব্য সমর্থন করেন।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবারও প্রেসিডেন্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। একই সঙ্গে জানিয়েছেন নতুন কোনো দল গঠনের পরিকল্পনা তার নেই। বরং রিপাবলিকান পার্টিকেই আরও সুসংহত করবেন।
রিপাবলিকানদের এই অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেন, নতুন দল গঠনের কোনো পরিকল্পনা তার নেই। ট্রাম্প হেরে যাওয়ার পরে অনেকেই বলছিলেন, এরপর নতুন দল তৈরি করে ফের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই শুরু করবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। কিন্তু ট্রাম্প সেই গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে বলেন, নতুন দলের প্রয়োজন নেই। কারণ, তার দল আছে। তিনি রিপাবলিকান পার্টির হয়েই লড়াইয়ে নামবেন। নতুন দল গঠন করলে রিপাবলিকানদের ভোট ভাগ হয়ে যাবে। রিপাবলিকান পার্টিকে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সুসংহত ও শক্তিশালী করতে চান বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
‘আমি নতুন করে কোনো দল গঠন করব না। এটি মিথ্যা খবর। আমরা আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হব, যা অতীতে কখনই ছিল না।’
যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সামনে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করব, যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তিশালী করব। আমরা উগ্রবাদ, সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ব। এগুলো কনিউনিজমের পথে ধাবিত করে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এদিন উত্তরসূরির কড়া সমালোচনা করেন ট্রাম্প। বলেন, তারা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি থেকে সরে ‘আমেরিকা লাস্ট’ হয়ে গেছে।
সম্মেলনে ট্রাম্প বারবার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার দিকে জোর দেন। তিনি জানান, এখানে আন্দোলন, দল ও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলার জন্য একত্রিত হয়েছেন।
এদিন আবারও নভেম্বরের নির্বাচনে জেতার দাবি করেন তিনি। বলেন, নভেম্বরের নির্বাচন চুরি হয়ে গেছে। আগামী নির্বাচনে লড়ার ইঙ্গিত দেন তিনি।
ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি রিপাবলিকানদের একাংশেরও সমালোচনা করেন তিনি। একটি তালিকা সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। সেখানে তার বিরুদ্ধে মুখ খোলা রিপাবলিকানদের নাম ছিল। ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবে যে রিপাবলিকানরা সমর্থন জানিয়েছিলেন, তাদেরও নাম ছিল। তালিকা পড়ে তিনি বলেন, এই নেতাদের দল থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত।
অনুমান করুন, ২০২৪ সালে কে প্রেসিডেন্ট হবেন—এমন প্রশ্ন সম্মেলনে বারবার করতে থাকেন ট্রাম্প। উপস্থিত সমর্থকরা জবাবে ‘ট্রাম্প, ট্রাম্প’ বলে স্লোগান দেন।
রিপাবলিকান পার্টিতে ট্রাম্পই এখন মূল নেতা। ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে রিপাবলিকান পার্টি ট্রাম্পকে ঘিরেই এগিয়ে যেতে চায়। প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে এখন অল্প ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্রেটিক পার্টি। মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকান পার্টি কবজা করতে পারলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য ক্ষমতার শেষ দুই বছর জটিল হয়ে উঠতে পারে। ট্রাম্প ফ্লোরিডায় সেই ইঙ্গিতই দিয়ে গেলেন।