সবচেয়ে বড় দশ হাসপাতালের ছয়টিই এশিয়ায়

মানুষের স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে হাসপাতাল। সব দেশেই সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় মানুষ সরাসরি স্বাস্থ্যসেবা পান। এর মধ্যে কোনো হাসপাতাল আকারে ছোট; সেবা পাওয়ার সুবিধাও সীমিত। আবার কোনোটি বিশাল, স্বাস্থ্যসেবার সুবিধাও বেশি। এসব হাসপাতালের মধ্যে শয্যাসংখ্যার ভিত্তিতে ওয়ার্ল্ডঅ্যাটলাস  সবচেয়ে বড় দশ হাসপাতালের তালিকা করেছে। এর মধ্যে ছয়টিই রয়েছে এশিয়া মহাদেশে। আসুন, জেনে নিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাসপাতালগুলো সম্পর্কে —

ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হসপিটাল অব ঝেংঝৌউ ইউনিভার্সিটি, হেনান, চীন। ছবি: সংগৃহীত

শয্যাসংখ্যায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ধরা হয় ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হসপিটাল অব ঝেংঝৌউ ইউনিভার্সিটিকে। চীনের হেনান প্রদেশে এ হাসপাতালের অবস্থান। শয্যা ৭ হাজার। ১৯২৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রদেশটির কাইফেং এলাকায় এ হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। পরে ১৯৫৮ সালে প্রদেশের রাজধানী ঝেংঝৌউয়ের বর্তমান ঠিকানায় এটি স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি এ হাসপাতালে চিকিৎসাসংক্রান্ত অতি উচ্চমানের বৈজ্ঞানিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। হাসপাতালটি বার্ষিক ৭৫০ কোটি ইউয়ানের বেশি রাজস্বের জোগান দেয়।

ওয়েস্ট চায়না মেডিকেল সেন্টার (চীন): বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাসপাতালের অবস্থানও চীনে। নাম ওয়েস্ট চায়না মেডিকেল সেন্টার। এটির শয্যাসংখ্যা ৪ হাজার ৩০০। চেংদু শহরে জিন নদীর তীরে বিশাল এ হাসপাতাল অবস্থিত। পশ্চিমা মিশনারিদের হাতে ১৯১৪ সালে ‘ওয়েস্ট চায়না ইউনিয়ন ইউনিভার্সিটি’ নামে হাসপাতালটির পত্তন হয়। ২০০০ সালে সিচুয়ান ইউনিভার্সিটির সঙ্গে একীভূত হয় এটি। হাসপাতালটিতে মোট ২৫টি গবেষণাগার, ৩৬টি ক্লিনিক্যাল বিভাগ, ১৫টি মেডিকেল টেকনোলজি বিভাগ রয়েছে। ৪৩টি দেশের দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ হাসপাতালের সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে।

ন্যাশনাল সেন্টার ফর মেন্টাল হেলথ (ফিলিপাইন): এশিয়ার আরেক দেশ ফিলিপাইনের মান্দালুয়ং শহরে প্রায় ৪৭ হেক্টর জায়গাজুড়ে দেশটির ন্যাশনাল সেন্টার ফর মেন্টাল হেলথের অবস্থান। শয্যার ভিত্তিতে এটি বিশ্বের তৃতীয় বড় হাসপাতাল। রয়েছে ৪ হাজার ২০০টি শয্যা। ১৯২৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ফিলিপাইনের বিপুলসংখ্যক মানসিক রোগী আর স্নায়ুরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সুবিধায় এ হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। এটি প্রতিষ্ঠার আগে এসব রোগীকে পৃথক দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হতো।

লিংকু চ্যাং গুং মেমোরিয়াল হাসপাতাল, তাইওয়ান। ছবি: সংগৃহীত

লিংকু চ্যাং গুং মেমোরিয়াল হাসপাতাল, তাইওয়ান: তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় ও বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম হাসপাতাল এটি। লিংকু চ্যাং গুং মেমোরিয়াল হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা ৪ হাজার। তাওইউয়ান সিটির গুইশান ডিস্ট্রিক্টে হাসপাতালটি অবস্থিত। হাসপাতাল নেটওয়ার্ক ‘চ্যাং গুং মেডিকেল ফাউন্ডেশন’–এর একটি অংশ হিসেবে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হাসপাতালটি। হাজারের বেশি রোগীর যকৃৎ প্রতিস্থাপনের জন্য এ হাসপাতালের ঝুলিতে অনন্য খ্যাতি রয়েছে।

আঙ্কারা বিলকেন্ত সিটি হাসপাতাল, তুরস্ক: তুরস্কের সবচেয়ে বড় আর বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম হাসপাতাল এটি। আঙ্কারা শহরের চানকায়া এলাকায় অবস্থিত এ হাসপাতালে ৩ হাজার ৮১০টি শয্যা রয়েছে। আঙ্কারা বিলকেন্ত সিটি হাসপাতাল তুলনামূলক নতুন একটি প্রতিষ্ঠান। এটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ। এ হাসপাতালে দুই শয্যার ৭২৫ কক্ষ, ৯০৪ পলিক্লিনিক, ৮২ ভিআইপি কক্ষ ও ৭০০ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) রয়েছে। প্রতিদিন ৮ হাজারের বেশি রোগীকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয় হাসপাতালটি। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহনের সুবিধা রয়েছে এখানে।

ন্যাশনাল হসপিটাল অব শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল এটি। রাজধানী কলম্বোয় ৩৬ একর জায়গাজুড়ে হাসপাতালটির অবস্থান। ন্যাশনাল হসপিটাল অব শ্রীলঙ্কায় রয়েছে ৩ হাজার ৪০৪টি শয্যা। বয়স বিবেচনায় এ হাসপাতাল অনেক পুরোনো। ১৮৬৪ সালে ‘জেনারেল হাসপাতাল’ হিসেবে এর যাাত্রা শুরু হয়। হাসপাতালটিতে ২১টি অস্ত্রোপচার কক্ষ ও ১৮টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) রয়েছে। এখানে বছরে ২০ লাখের বেশি মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আর প্রতি মাসে গড়ে ৫ হাজার ছোট–বড় অস্ত্রোপচার করা হয়।
ক্রিস হানি বারাগওয়ানাথ হাসপাতাল, দক্ষিণ আফ্রিকা। ছবি: সংগৃহীত

ক্রিস হানি বারাগওয়ানাথ হাসপাতাল, দক্ষিণ আফ্রিকা: শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা নয়, পুরো আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল এটি। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের দক্ষিণাঞ্চলে সোয়েতো শহরে ১৭০ একরের বেশি জায়গাজুড়ে অবস্থিত ক্রিস হানি বারাগওয়ানাথ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৩ হাজার ২০০।

কাসের এল আয়নি হাসপাতাল, মিসর: বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাসপাতালের তালিকায় আট নম্বরে কাসের এল আয়নি হাসপাতাল। আফ্রিকার দেশ মিসরের রাজধানী কায়রোয় এ হাসপাতালের অবস্থান। এখানে শয্যা রয়েছে ৩ হাজার ২০০টি। চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি এ হাসপাতাল গবেষণা ও প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঐতিহ্যবাহী কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে হাসপাতালটির। এটির পরিচালনার ভার মিসরের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়ের হাতে।

ক্লিনিক্যাল সেন্টার অব সার্বিয়া: ইউরোপের দেশ সার্বিয়ার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। সেই সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাসপাতালের তালিকায় ৯ নম্বরে। দেশটির রাজধানী বেলগ্রেডে ৩৪ একর জায়গাজুড়ে এর অবস্থান। হাসপাতালটিতে শয্যা রয়েছে ৩ হাজার ১৫০টি। প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি মানুষ এখান থেকে চিকিৎসা নেন। বছরজুড়ে ৭ হাজারের বেশি নবজাতকের জন্ম হয় এ হাসপাতালে। বছরে অস্ত্রোপচার করা হয় ৫০ হাজার।

গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কোরিকড়, ভারত। ছবি: সংগৃহীত

গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কোরিকড়, ভারত: ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কেরালার একটি সরকারি হাসপাতাল গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ, কোরিকড়। শুধু ভারতের বৃহত্তম হাসপাতাল নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাসপাতালের তালিকায় ১০ নম্বরে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের নাম। কেরালার কোরিকড় শহরের কেন্দ্র থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বে এ হাসপাতালের অবস্থান। ছয় দশকের বেশি আগে, ১৯৫৭ সালে হাসপাতালটির পত্তন হয়। ভারতের অন্যতম বড় মেডিকেল কলেজ এটি। এ হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৩ হাজার ২৫।

Comments (0)
Add Comment