বিশ্বজুড়ে আজ বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) পালিত হচ্ছে খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’। কিন্তু যীশু খ্রিস্টের জন্মস্থান ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে নেই উৎসবের আমেজ। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতের অশুভ ছায়া এই উৎসবে প্রতিফলিত হয়েছে এবং এক গুরুগম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। খবর এএফপির।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, টানা দ্বিতীয় বছরের মতো ইসরায়েল অধিকৃত এই শহরে বড়দিনের উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়নি। অতীতে বড়দিন উদযাপন করতে আসা লাখো পর্যটকের আগমনে মুখরিত শহরটিতে আজ মাত্র কয়েক শ মানুষ জমায়েত হয়েছেন।
সেইন্ট পিটার ব্যাসিলিকায় পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বাসীদের ‘যুদ্ধ, মেশিনগানের গুলি ও স্কুল-হাসপাতালে ফেলা বোমায় হতাহত শিশুদের’ কথা ভাবার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ‘নির্মম ইসরায়েলি হামলার’ নিন্দা জানান। যথারীতি, তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি কূটনীতিকরা পোপের বক্তব্যে আপত্তি জানিয়েছেন।
এই ফিলিস্তিনি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ম্যাঞ্জার চত্বরের নেটিভিটি গির্জায় সকালের নীরবতা ভেঙে একদল স্কাউট পদযাত্রা শুরু করেন। ধারণা করা হয়, এখানেই যীশুর জন্ম হয়েছিল। তার জন্মস্থানেই এই গির্জা নির্মাণ করা হয়েছিল। এ সময় স্কাউটদের হাতে ছিল ‘আমাদের শিশুরা হাসতে ও খেলতে চায়’, ‘আমরা জীবন চাই, মৃত্যু চাই না’ লেখা ব্যানার।
হীতপ্রতি বছরই বেথলেহেমের এই চত্বরে বড়দিনের সময় একটি অতিকায় ক্রিসমাস ট্রি বসানো হোত। উৎসবের অংশ হিসেবে সেই গাছটিকে নানা রঙের আলোয় সজ্জিত করা হোত। কিন্তু গত বছরের মতো এবারও এসব আয়োজন ছিল অনুপস্থিত।
বেথলেহেমের মেয়র অ্যান্টন সালমান এএফপিকে বলেন, এ বছর আমরা আমাদের উৎসব সীমিত রাখছি। এ বছর চিরাচরিত উৎসবগুলো অনেকাংশেই সীমিত আকারে পালন করা হবে। তবে গির্জার সুবিখ্যাত প্রার্থনাসহ অন্য ধর্মীয় আয়োজন অব্যাহত থাকবে। প্রার্থনার নেতৃত্ব দেবেন আর্চবিশপ পিয়েরবাতিস্তা পিৎসাবাল্লা।
বেথলেহেমে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে আর্চবিশপ জানান, মাত্রই গাজা থেকে ফিরেছেন তিনি। সেখানে সবকিছু ধ্বংস হয়েছে গেছে। দারিদ্র্য ও বিপর্যয় চারিদিকে।
আর্চবিশপ বলেন, আমি জীবনের নিশানাও দেখেছি—তারা হাল ছেড়ে দেয়নি। আপনাদেরও উচিত হবে না হাল ছেড়ে দেওয়া। কোনো পরিস্থিতিতেই নয়।
হীতখ্রিস্টানদের পবিত্র ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত হলেও এখানে তারা সংখ্যালঘু হিসেবেই বিবেচিত। মোট এক কোটি ৪০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ইসরায়েলে এক লাখ ৮৫ হাজার ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ৪৭ হাজার খ্রিস্টান ধর্ম পালন করেন। উৎসব নয়, প্রার্থনার মাঝেই তারা এবারের বড়দিনের উৎসব কাটাতে আগ্রহী।
মেয়র সালমান বলেন, বড়দিন একটি আস্থার উৎসব। ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রেখে আমরা প্রার্থনা করব আর আমাদের সব দুর্দশার অবসান হোক, এই কামনা করব।
গাজা ও সিরিয়ায় নেই উৎসবের আমেজ : ধ্বংস, মৃত্যু ও জীবনের প্রতি সার্বক্ষণিক হুমকির মাঝেই গাজায় হাজারো খ্রিস্টান গির্জায় জমায়েত হয়ে যুদ্ধের অবসান চেয়ে প্রার্থনা করেছেন।
জর্জ আল-সায়েঘ বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজা সিটির দ্বাদশ শতাব্দীর গ্রিক অর্থোডক্স গির্জা ‘চার্চ অব সেইন্ট পোরিফাইরিয়াসে’ আশ্রয় নিয়ে আছেন। তিনি বলেন, এবারের বড়দিনে মৃত্যু ও ধ্বংসের দুর্গন্ধ ছাড়া আর কিছুই নেই। কোনো আনন্দ, উৎসবের আমেজ, কিছুই নেই। আগামী বড়দিন পর্যন্ত আমরা কে কে বেঁচে থাকব, সেটাই জানি না।