ইসরাইলের দুর্নীতিবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশটির রাজনীতিতে চালিয়ে গেছেন ধারাবাহিক নাটকীয়তা।
ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে কট্টরপন্থি ইহুদিদের খুশি রাখতে একের পর এক ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল এবং হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন গাজা, জেরুজালেম ও পশ্চিমতীরে।
কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হচ্ছে না তার। নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ডানপন্থি দল লিকুদ পার্টির সরকারের যবনিকা টানতে চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে দেশটির বিরোধী দলগুলো। দেশটির মধ্যপন্থি দল ইয়েস আতিদের নেতা ইয়ার লাপিড জোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা নাফতালি বেনেটের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে চলেছেন।
লাপিডকে সরকার গঠনের জন্য ২৮ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের ১১ দিনের হামলায় ওই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়। ওই হামলার জের ধরে লাপিডের জোট শরিক হওয়ার দৌড়ে থাকা আরব ইসলামিস্ট রাম পার্টি আলোচনা থেকে বেরিয়ে যায়।
এখন জোট সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন জোগাড়ে লাপিডের (৫৭) হাতে ছিল আর মাত্র দুদিন। শেষ সময়ে এসে উগ্র জাতীয়তাবাদী বেনেটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন তিনি। সম্ভাব্য এই চুক্তি অনুযায়ী ১২০ আসনের ইসরাইলি পার্লামেন্টে মাত্র ছয় আসন নিয়েই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বেনেট (৪৯)।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, উভয়পক্ষ যে চুক্তিতে সম্মত হয়েছে, সেখানে আগামী দুই বছরের জন্য বেনেট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। এর পর মেয়াদের বাকি দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন লাপিড।
শনিবার রাতে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি বেনেট ও অন্যান্য দলের নেতাদের ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়। তিন দফায় প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় তারা। কিন্তু সেই প্রস্তাবে আর সাড়া মেলেনি।
৭১ বছর বয়সি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় বিচার চলছে। বিরোধী জোটে গিয়ে তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে রোববার দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সমর্থন নেন বেনেট।
মাত্র দুবছরের মধ্যে চারটি পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু এ সময়ে টেকসই কোনো সরকার গঠিত হয়নি। সর্বশেষ সেখানে নির্বাচন হয়েছে গত ২৩ মার্চ।
এর পর বিরোধী দল ইয়েস আটিদ পার্টির নেতা ইয়াইর লাপিডকে নতুন সরকার গঠনের জন্য ২৮ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ সময় শেষ হচ্ছে আগামী বুধবার।
তিনি এ সময়ের মধ্যে নতুন জোট গঠনের চেষ্টা করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তার সফলতা বড় অংশে নির্ভর করছে উগ্র ডানপন্থি ইয়ামিনা পার্টির নেতা নাফতালি বেনেটের ওপর।
রোববার নিজের সিদ্ধান্ত জানানোর কথা তার। পার্লামেন্টে তার দলের আছে ছয়টি আসন। যদি তিনি লাপিডের সঙ্গে জোটে যোগ দেন, তা হলে বিদায় ঘণ্টা বেজে যাবে নেতানিয়াহুর।
দেশে রেকর্ড সময় ক্ষমতায় থাকা এই প্রধানমন্ত্রী তার রেকর্ড ধরে রাখতে পারবেন না। এরই মধ্যে মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে— ইয়াইর লাপিড একটি জোট গঠনের প্রায় শেষপর্যায়ে। এ অবস্থায় নাফতালি বেনেট তার নিজের দলের এমপিদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা।
তাদের মতামত নেবেন যে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বাম, মধ্য এবং ডানপন্থিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই জোটে যোগ দেবেন কিনা। যদি এমন জোট হয়ও, তবে তা হতে পারে ভঙ্গুর। ফলে এতে পার্লামেন্টে আরব সদস্যদের সমর্থন প্রয়োজন হবে, যাদের রয়েছে ইয়ামিনা দলের সঙ্গে মতের বিস্তর পার্থক্য।
সাম্প্রতিক সময়ে জনসমক্ষে নীরবতা বজায় রাখছেন নাফতালি বেনেট। অন্যদিকে লিকুদ পার্টির নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার নিজের মেয়াদের ইতি ঘটতে পারে বলে টুইটারে ইঙ্গিত দিয়েছেন শুক্রবার। তিনি লিখেছেন রিয়েল অ্যালার্ট। বিপজ্জনক বামপন্থি একটি প্রশাসন সামনে এগিয়ে আসছে।
ইয়ামিনা দল থেকে শনিবার দিনশেষে ঘোষণা দিয়েছে যে, নাফতালি বেনেট রোববার নিজ দলের এমপিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
ডানপন্থি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায়। তার এ সময়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের বিচার চলছে আদালতে। তবে তিনি নিজে এসব দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সেই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এবার চেষ্টা করছেন নাফতালি বেনেট।