হাসিনার সামনে সেদিন জুতা ছুড়ে মেরেছিলেন সেনা কর্মকর্তারা

বিডিআর বিদ্রোহ

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। ওই ঘটনার পর সেনাকুঞ্জে যান সাবেক স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য দেওয়ার এক পর্যায়ে সেনা কর্মকর্তারা চেয়ার ছুড়ে মারছিলেন, জুতা ছুড়ে মারছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে। সেনাপ্রধান পেছনে একরকম মুখ লাগিয়ে ছিলেন। -সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষৎকারে সেই দিনের ঘটনা বর্ণনা করেছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আমিন।

সেনা কর্মকর্তা আমিন বলেন, ‘১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আসছেন সেনাকুঞ্জে। ১০০০-১৫০০ কমান্ডো, কোয়ালিফাইড অফিসার। প্রত্যেকটা অফিসার কমান্ডো করা। উত্তেজিত অফিসার, রক্ত টগবগ করছে। আমরা তখন জেনারেল হয়ে গেছি।’

লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আমিন বলেন, ‘আমরা আর ঘুমাতে পারতাম না। এদের মধ্যে সাহারা খাতুন আসতে চান। অফিসাররা বললেন, সাহারা খাতুন থাকতে পারবেন না। এদের মধ্যে ফারুক খান আসতে চান। অফিসাররা বললেন না, উনি থাকতে পারবেন না। তারপর শুধু কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে অ্যালাউ করলেন অফিসাররা আর জেনারেল তারিক ছিলেন, আর কোনো সিভিলিয়ান ছিল না। কাউকে অ্যালাউ করা হয়নি, এগুলোকে ম্যানেজ করা খুবই কঠিন অবস্থা ছিল।’

আমিন আরও বলেন, শেখ হাসিনা আসলেন, বক্তব্য শুরু করলেন। কিছুক্ষণ বলার পর কর্মকর্তারা উত্তেজিত হয়ে গেলেন। পয়েন্টে পয়েন্টে বলা হলো বলা হচ্ছে। এক পর্যায়ে অফিসাররা উত্তেজিত হয়ে গেলেন। ১০০০ অফিসার, বিশাল বোর্ড অডিটোরিয়াম, সেনাকুঞ্জ, সব কর্মকর্তা এই পর্যন্ত চলে আসেন। এতটাই কাছাকাছি চলে আসছেন সবাই- সেই সময় যেকোনো অঘটন ঘটে যেতে পারত।’

আমিন বলেন, ‘এসএসএফ উনাকে ঘিরে ফেলেছে। উনাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে, এসএসএফের কয়টা কর্মকর্তা- ২০টা ৩০টা, কী করতে পারবে ১০০০ কমান্ডো, কোয়ালিফায়েড মেজর এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল রক্ত তাদের টগবগ করছে। তারা চেয়ার ছুড়ে ছুড়ে মারছিল, জুতা ছুড়ে ছুড়ে মারছিল প্রধানমন্ত্রীর সামনে। সেনাপ্রধান পেছনে একরকম মুখ লাগিয়ে ছিলেন।’

লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আমিন আরও বলেন, ‘শুধু বললেন- জেনারেলরা তোমরা এই অবস্থা টেকওভার করো- জেনারেলস টেকওভার। কেমন করে সামাল দেব, এরা তো কথা শুনতেছে না, কী করব? মুশকিল হলো একটা অঘটন তো ঘটে যেতে পারে যেকোনো সময়। এটা ইতিহাস ভাই- আমাকে ইয়ে করেন না, আমি যেটা হয়েছে সেটাই বলছি। নির্মোহ ইতিহাস বলার চেষ্টা করতেছি আমি। যেটা দেখেছি- আমি নিজের সাক্ষীতে বলছি।’

Comments (0)
Add Comment