শুল্ক বৃদ্ধির ফলে দুর্বল দেশগুলোতে গভীর সংকট

জাতিসংঘের জরুরি সতর্কবার্তা

বৈশ্বিক বাণিজ্যে অপ্রত্যাশিত মেঘে ঢেকে যাচ্ছে দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ভবিষ্যত। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বব্যাপী শুল্ক বৃদ্ধির ফলে এই দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনসিটিএডি) সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে সতর্ক করেছে, শুল্কের এই নতুন নীতিমালা দরিদ্র দেশগুলোর রপ্তানি প্রবাহে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও প্রকট করবে। খবর গালফ নিউজ।

প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘Sparing the Vulnerable: The Cost of New Tariff Burdens’, যা স্পষ্ট করে জানায় যে, ক্ষুদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো এখন অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখে।

২০২৫ সালের ২ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্র শুরু করেছে ১০ শতাংশ সার্বজনীন শুল্ক আরোপ। কিন্তু চরম সময় আসছে জুলাই থেকে, যখন ২২টি উন্নয়নশীল দেশের ওপর দেশভিত্তিক শুল্ক হার বৃদ্ধি পাবে ২৫ শতাংশেরও ওপরে। এই সিদ্ধান্ত প্রথাগত বাণিজ্য চুক্তি ও ডব্লিউটিও নিয়মের বাইরেই নেয়া হয়েছে, ফলে দীর্ঘদিন শুল্ক ছাড় পাওয়া দেশেরাও এবার প্রভাবিত হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কারা?

এশিয়া ও ওশেনিয়া: শুল্ক হার বেড়ে দাঁড়াবে ১৩ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশে।
ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয়: যেখানে আগে শুল্ক ছিল ০.৫ শতাংশের নিচে, এখন তা পৌঁছাবে ১৩ শতাংশেরও বেশি।
কৃষি ও বস্ত্র খাত: যেগুলো দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, সেখানে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসবে।
এই শুল্ক বৃদ্ধি শুধুমাত্র লক্ষ্যভুক্ত দেশগুলোকে নয়, বরং যারা সরাসরি শুল্কের টার্গেটে নেই, তারাও বাড়তি খরচ ও সংকটের মুখে পড়ছে।

যদিও এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির মাত্র ০.৩ শতাংশের জন্য দায়ী, তবুও তারা ‘এক ছাঁচে ঢেলে’ শুল্ক বৃদ্ধির শিকার হচ্ছে। এতে বিনিয়োগ কমে যাবে, বাজারে প্রবেশের সুযোগ সংকুচিত হবে, আর দরিদ্র দেশগুলোর উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

ইউএনসিটিএডি জরুরি নীতিগত হস্তক্ষেপের ডাক দিয়েছে। তাদের প্রস্তাবিত পদক্ষেপসমূহ:
ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে বিশেষ শুল্ক ছাড় দেয়া
বাণিজ্য সহজীকরণে সহায়তা বৃদ্ধি
অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা

এই প্রতিবেদন ও এর সঙ্গে সংযুক্ত অনলাইন ডেটা প্ল্যাটফর্ম নীতিনির্ধারকদের জন্য সরঞ্জাম হিসেবে কাজ করবে, যাতে তারা দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বৈশ্বিক বাণিজ্যের উত্তেজনা বাড়তে থাকা অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেসব দেশ, যাদের সাহায্যের হাত আর্থিক ও নীতিগতভাবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সময়মতো সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে, এই শুল্ক ধাক্কা দরিদ্র দেশগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে।