রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানী এবং অনেক অঞ্চলে সূর্যের দেখা মেলেনি। উত্তুরে হাওয়ায় যেন টিকা দায়। ঘরের বাইরে গেলে শরীরে কাঁপন ধরে। উত্তরের জনপদগুলোয় দিনের বেলায়ও আলো জ্বালিয়ে চলেছে যানবাহনগুলো।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শুক্রবার বাকি দিনেও কুয়াশা কমার লক্ষণ নেই। রাজধানীতে শুক্রবারের তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গতকাল থেকে রোদ না ওঠায় শীতের অনুভূতি আজ অনেকটাই বেড়েছে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ডিসেম্বরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলেও এ মাসে শীত জাঁকিয়ে বসতে পারে। হতে পারে একাধিক তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, এমন কুয়াশা আরও দু-তিন দিন থাকবে। এই সময়ে ঠান্ডা এখনকার মতোই থাকবে। এরপর কুয়াশা কেটে গেলে রাতের তাপমাত্রা ক্রমেই কমে শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। জানুয়ারির ৬ থেকে ৭ তারিখের পর রাতের তাপমাত্রা কমে ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসতে পারে।
আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে একটি থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং একটি থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এক দিন ধরে দেশের চুয়াডাঙ্গা জেলা এবং পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
সাধারণত কোনো স্থানে তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়।
এদিকে ঘন কুয়াশার মধ্যে আজ দেশের কয়েকটি স্থানে শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। এর মধ্যে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সকাল ৯টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। এ শহরে তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরের আরেক জনপদ কুড়িগ্রামের রাজারহাটের তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আজকের তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬, রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৮, নওগাঁর বদলগাছীতে ১০ ডিগ্রি এবং পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অন্য দিকে পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা নামল ৮ ডিগ্রির ঘরে। এ তাপমাত্রায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে উত্তরের হিমালয়কন্যা পঞ্চগড়। চলতি শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের দাপটে বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে উত্তরের এ জেলায়।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকাল ৯টায় এ অঞ্চলে তাপমাত্রা রের্কড হয়েছে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২ জানুয়ারি সকাল ৯টায় রেকর্ড হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। গত ১৮ ডিসেম্বর তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ছয় দিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়েছে এ জেলায়।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত দিনের মতো ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার আবরণে ঢাকা পড়েছে উত্তরের প্রান্তিক এ জেলা। কুয়াশার কারণে শহর ও গ্রামের সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাসবাস, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলগুলোকে চলতে দেখা গেছে। হিমেল বাতাসের সাথে ঝরছে হিম শিশির। এমন পরিস্থিতিতে দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল, খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, তাপমাত্রা কমার চেয়েও বেশি অসুবিধা হচ্ছে হিমশীতল বাতাসে। এর পাশাপাশি ঘন কুয়াশা থাকায় বাতাসে তা কাঁটার মতো বিঁধতে থাকে। ঘরে ঘরে লেপ-কাঁথা নামানো হয়েছে। তবে গত কয়েকদিন থেকেই শীতের তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষজন। গ্রামের নারীরা বলছেন, তীব্রশীতের কারণে ঘরের ফ্লোর, আসবাবপত্র, বিছানাপত্রসহ সবকিছু যেন বরফ হয়ে উঠে। ভোরে উঠে কাজ করতে খুবই অসুবিধা হয়ে উঠে।
দিনমজুর হোসেন আলী ও আলাউদ্দিন বলেন, তিন-চারদিন ধরে কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসের কারণে শীতটা মনে হচ্ছে অনেক বেড়েছে। কনকনে শীতের কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। গরম কাপড় নাই। এখনও সরকারি বা বেসরকারি কোন কম্বল পাই নাই। খুব কষ্টে আছি।