শিশু ও প্রবীণদের জন্য ‘আমাদের বাড়ি’

স্বচ্ছল-অস্বচ্ছল এবং প্রবীণ-শিশুদের সবাইকে এক ছাদের নিচে নিয়ে এসে বসবাসের অনন্য এক পল্লি গড়ে উঠেছে যশোরের নাটুয়াপাড়ায়। ‘আমাদের বাড়ি’ নামের সমন্বিত উদ্যোগটি বাংলাদেশে প্রথম।

যশোরের সন্তান ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট প্রফেসর ডা. এম এ রশিদ ‘আমাদের বাড়ির’ স্বপ্নদ্রষ্টা। তার ঐকান্তিক পরিশ্রমের ফসল এই প্রবীণ ও শিশু নিবাস।

যশোর শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার নাটুয়াপাড়া গ্রামে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মিত হয়েছে। এর ৮০ শতাংশ সরকারের এবং ২০ শতাংশ জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের। গ্রামীণ মনোরম পরিবেশে প্রায় ২ একর জমির ওপর এটি নির্মিত। ৪ তলার ভবনে ১৫০ জন বসবাস করতে পারবেন।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন এবং ফাউন্ডেশনকে বুঝিয়ে দেন।

‘আমাদের বাড়ির’ স্বপ্নদ্রষ্টা জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এমএ রশিদ জানান, সমাজ ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের ছেলে-মেয়েরা দেশে-বিদেশে কাজের সন্ধানে চলে যাচ্ছেন। বাড়িতে থেকে যাচ্ছেন প্রবীণরা। তারা হয়ে পড়ছেন অবহেলিত। তাদের দেখার কেউ থাকছে না। আবার বাড়ি থেকে মা-বাবা কাজে চলে গেলেও বাড়িতে দাদা-দাদি, নানা-নানির কাছে রয়ে যাচ্ছে নাতি-নাতনিরা। ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরও দেখভালের কেউ থাকছে না। এ জন্য দাদা-দাদি, নানা-নানিরা নাতি-নাতনিদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দের সঙ্গে এখানে থাকার সুযোগ পাবে। তারা সারা দিন এখানে থেকে নিজেদের বাড়ি ফিরে যেতে পারবে। আবার এখানে আবাসিক সুবিধায় থাকতেও পারবেন।

ডা. প্রফেসর রশিদ বলেন, ‘সমাজের আরেকটি বড় অংশ অবহেলিত শিশুরা। তাদের আমরা অনাথ বা এতিম বলছি না। যথাযথ সুবিধার অভাবে এরা মাদকাসক্তসহ নৈতিক অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। এ সব শিশুদের এখানে নিয়ে এসে যত্নের সঙ্গে গড়ে তোলা হবে, যেন তারা বিপথগামী হতে না পারে।’

তিনি আরও বলেন, এখানে তারা শুধু থাকবে, শুবে আর খাবে, ব্যাপারটা এমনও না। এই কম্পাউন্ডের চারপাশ জুড়ে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল, মহিলা মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানে তারা লেখাপড়া শিখতে পারবে। প্রবীণদের জন্য এখানে ব্যবস্থা আছে কৃষিকাজ, বাগান করা, পোলট্রি, গরু-ছাগলের খামার, মাছচাষের মতো কাজে যুক্ত থাকার সুযোগ। রয়েছে শরীরচর্চা, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার সবরকম সুবিধা। এমনকি ইসিজি, এক্সরেসহ প্যাথলজিকাল পরীক্ষা, বার্ষিক স্বাস্থ্য চেকআপ, জরুরি প্রয়োজনে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে শহরের দুটি হাসপাতালের সঙ্গে করা চুক্তির আলোকে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসুবিধার ব্যবস্থা। ছোট-বড় সবার জন্যেই রয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, এই মুহূর্তে এখানে বসবাসের জন্য প্রায় ৭০ জনের ডাটাবেজ করা হয়েছে। ১২ জন অবস্থান করছেন। উদ্বোধনের পরপরই সবার থাকার ব্যবস্থা উন্মুক্ত করা হবে। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযাযী ৩০ ভাগ বিনামূল্যে রাখা হবে। ৭০ ভাগ থাকবে যৌক্তিক মূল্যে। এটা সম্পূর্ণ অলাভজনক সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলে দানশীলরা এখানে আর্থিক সহায়তা দিয়ে সামাজিক অবদানে সুযোগ পাবেন। এখানে দেওয়া সহায়তার অর্থ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুসারে সম্পূর্ণ আয়করমুক্ত সুবিধার আওতায় থাকবে।

সমাজের দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রফেসর ডা. এমএ রশীদ।

Comments (0)
Add Comment