গত শনিবার রাত সোয়া ২টার দিকে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের নিজ বাসায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন কবি বীণাপাণি রায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
বীণাপাণি কিংবদন্তী লোকগানের শিল্পী হরলাল রায়ের স্ত্রী এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের মা। তার মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেন তার নাতি এবং রথীন্দ্রনাথ রায়ের ভাতিজা সুদেব রায়।
রথীন্দ্রনাথ রায় মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতারের নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন করে অনন্য ভূমিকা পালন করেন এবং কণ্ঠযুদ্ধশিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘তুমি আরেকবার আসিয়া যাও মোরে কান্দাইয়া’, খোদার ঘরে নালিশ করতে দিল না আমারে’, ‘ছোটদের বড়দের সকলের’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবরে’, ‘সবাই বলে বয়স বাড়ে’, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে’, ‘ও যার অন্তরে বাহিরে’, ‘আমি কি তোর আপন ছিলাম না’, ‘বাওকুমটা বাতাস যেমন’, ‘হীরামতি হীরামতি ও হীরামতি’, নদীর কূলে বইসা রে’, ‘কবিরাজি এলোপ্যাথি’, ‘বায়োস্কোপের বাক্স’, ‘একদিন রাজা ফকির’ প্রভৃতি।
মাল্টিনিউজটোয়েন্টিফোর পাঠকদের জন্য বীণাপানির রায়ের স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন তার নাতি এবং রথীন্দ্রনাথ রায়ের ভাতিজা সংগীতশিল্পী সুদেব রায়ঃ
আমার ঠাকুমা একজন গুণী মানুষ ছিলেন। ঠাকুমার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার ছিল। তিনি একজন রত্নগর্ভা মা ছিলেন। ছিলেন একজন স্বভাবকবি। ঠাকুমা আমাকে অনেক ভালোবাসতেন।
ঠাকুমা কবিতার পাশাপাশি অসংখ্য গানও রচনা করেছেন। তার গানগুলো ছিল মূলত ভাওয়াইয়া গান। তিনি কিছু গান নিজে সুর করেছিলেন।
আসছে বইমেলাতে ঠাকুমার একটা কবিতার বই প্রকাশ করা হবে। কিন্তু আফসোস, ঠাকুমা তা দেখে যেতে পারলেন না। বইটি ঠাকুমার স্বপ্ন ছিল। বইটির নাম “কোন সাধনায় পাবো তোরে “।
ঠাকুমার একটা বিষয় আমার কাছে খুব ভালো লাগতো। ঠাকুমা প্রতিদিন সকাল-রাত অনেক বই পড়তেন। ধমীয় বই পড়তেন বেশি। তিনি নিজের কাজ নিজে করতে ভালোবাসতেন।
তার কিছু বিখ্যাত কবিতাঃ মা জননী,চিনলি নারে অবোধ মন,তুমি চন্দ্র সূর্য, তুমি নিত্য তুমি সত্য,এসো হে বৈশাখ।
আর গানঃ মুই যাইম তোর সাথে, হামার রংপুর জেলা, মোর দুঃখের কথা শোন।
পরিশেষে ঠাকুরমা’র বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। আমার ঠাকুমার জন্য সবাই প্রার্থনা করবেন।