সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ এবং কসোভোর মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশকে দেখতে হবে যে, আমাদের কোন পণ্যগুলো আমরা রফতানি এবং কোনগুলো আমদানি করতে পারি।’ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে কসোভোর নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত গুনার ইউরিয়া সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে তিনি একথা বলেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তে কসোভোর স্বাধীনতার ১০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে বাংলাদেশ দেশটির সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের করে। এর আগের বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ কসোভোকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়।
কসোভো ইউরোপের বলকান অঞ্চলের একটি রাষ্ট্র, যা আগে সার্বিয়ার একটি প্রদেশ ছিলো। প্রদেশটি ১৯৯৯ সাল থেকে জাতিসঙ্ঘ প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কসোভো স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
গুনার ইউরিয়া ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির প্রথম রাষ্ট্রদূত। তার সাথে কথা বলেছেন মাল্টিনিউজটোয়েন্টিফোর বার্তা সম্পাদক তারিক চয়নঃ
*আপনার দায়িত্ব গ্রহণের বেশিদিন হয়নি। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে কেমন দেখলেন?
রাষ্ট্রদূত: বাংলাদেশে আমার দেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অনেক বড় সম্মান ও সুযোগ। আজ অবধি যেসব বাংলাদেশির সঙ্গে দেখা করেছি, তাদের আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ। বাংলাদেশের জনগণ খুব আন্তরিক। কসোভোর জনগণের সাথে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে দুদেশের জনগণই দৃঢ় পারিবারিক বন্ধনে বিশ্বাসী। তবে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের সামনেও অনেক চ্যালেঞ্জ।
*বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আপনার সাথে বৈঠকে বলেছেন, কসোভোর বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, আইসিটিসহ বেশ কিছু গুরুতপূর্ণ সেক্টরে বিনিয়োগ করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। আপনার বক্তব্য কি?
রাষ্ট্রদূত: বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। কসোভোর বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের স্পেশাল ইকোনমিক জোনে কসোভোর বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবে। ব্যবসায়ীদের পারস্পরিক সফর বিনিময়ের মাধ্যমে কাজটি সহজ হতে পারে। এজন্য উভয় দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়া প্রয়োজন। এতে করে উভয় দেশের ব্যবসায়ীগণ বাণিজ্য ও বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে।
*সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সাথে সম্প্রতি আপনার বৈঠক হয়েছে। এ বিষয়ে কি বলবেন?
রাষ্ট্রদূত: আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চাই এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম চালু করতে চাই। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণ, জাদুঘর ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে পারি।
*এরই মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকারের সাথেও আপনার দেখা হয়েছে। স্পিকার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, কসোভো নতুন স্বাধীন দেশ হিসেবে উদীয়মান। সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় করা সম্ভব। তিনি আপনার মাধ্যমে কসোভোর ব্যবসায়ী সমাজকে পাটজাত পণ্যের প্রসার- যা পরিবেশবান্ধব, ওষুধ শিল্প ও ১০০টি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগেরও আহবান জানানা…
রাষ্ট্রদূত: হ্যা৷ আমিও বাংলাদেশের সাথে কসোভোর বন্ধন সুদৃঢ় করতে কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করত: সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেছি।
*দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বলকান উপদ্বীপের কেন্দ্রে অবস্থিত কসোভোর প্রকৃতি উন্নতমানের পর্যটনের প্রতিনিধিত্ব করে। পর্যটনের শিল্পের বিকাশের জন্য কী ভাবছেন?
রাষ্ট্রদূত: কসোভোতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং পর্যটন সংস্থান রয়েছে। কসোভোর রয়েছে বেশ সুন্দর পর্বতমালা, যা শীতকালীন পর্যটনের জন্য উপযুক্ত, স্বতন্ত্র স্থাপত্য শিল্প, অনন্য ধর্মীয় ঐতিহ্য। সাথে আছে সুস্বাদু খাবার।
আর কসোভো পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি দেশ। পর্যটন ক্ষেত্রে কাঠামোগত সংস্কারের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি সামগ্রিক বিনিয়োগ কসোভোর পর্যটন শিল্পের আরও বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ‘টুরিজ্যম প্যাকেজ’র জন্য আমরা ট্যুর অপারেটরদের উত্সাহিত করছি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব, কনসার্টসহ অন্যান্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রম বিদেশি পর্যটকদের কাছে কসোভোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
*বাংলাদেশিদের জন্য কসোভোর রাজধানী প্রিস্টিনা যেতে কোনো ফরমাল ট্রাভেল রুট রয়েছে? কসোভো সরকার কি বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বল্পমেয়াদী ভ্রমণের জন্য এই রুট সহজ করবে?
রাষ্ট্রদূত: দুর্ভাগ্যক্রমে কোনো সরাসরি ফ্লাইট নেই। আশা করি, সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে একদিন এই রুটটি এয়ারলাইনস্ গুলোর কাছে আকর্ষণীয় হবে। তবে গত কয়েকমাসে অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তা কসোভোতে এসেছেন। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি ভবিষ্যতে নতুন সংযোগ ও নীতির মাধ্যমে এই রুটে সবার জন্য ভ্রমণ সহজ হবে।
* আপনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভ্রমণ করেছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
রাষ্ট্রদূত: শরনার্থী কি জিনিস, তাদের সাহায্য বলতে কি বোঝায়- তা আমাদের চেয়ে ভালো কে জানে! এতো সংখ্যক রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সর্বোচ্চ প্রশংসা পাওয়ার দাবীদার। আমাদের অভিজ্ঞতা অবশ্য বলে শরনার্থীদের বসবাসের জন্য সেরা জায়গা তাদের নিজ মাতৃভূমি। আমরা সকল রোহিঙ্গার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পক্ষে এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশের গৃহীত নীতিকেও সমর্থন করি।
*প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আপনার বৈঠকটি কেমন ছিল?
রাষ্ট্রদূত: খুব ভালো। সমগ্র বিশ্বে শেখ হাসিনার এবং বাংলাদেশের বিরাট ভাবমূর্তি রয়েছে। বাংলাদেশের আইসিটি খাতটি খুব সমৃদ্ধ। একথা আমি তাকে বলেছি। তিনিও আমাকে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকালিন সময়ে সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আমাদের দুই দেশের কোন পণ্যগুলো আমরা রপ্তানি এবং কোনগুলো আমদানী করতে পারি, তা খুঁজে বের করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
*আপনার দায়িত্বপালকালীন সময়ে বাংলাদেশ-কসোভো সম্পর্ক নিয়ে কি ধরনের কাজ করতে চান তা যদি বলতেন…
রাষ্ট্রদূত: আমি দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করবো। এ সহযোগিতাকে আরো বাড়াতে চাই। আমি মনে করি বাংলাদেশ-কসোভো একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানলে অর্থনৈতিক সহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অনেক দ্বার উন্মোচিত হবে।
*আপনার মূল্যবান সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ।
রাষ্ট্রদূত: আপনাকে এবং মাল্টিনিউজটোয়েন্টিফোর পাঠকদেরও ধন্যবাদ।