ইউক্রেনে আবারও মিসাইল বৃষ্টি! বলা হচ্ছে, এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের উপরে সবথেকে ভয়াবহ মিসাইল হামলা। শতাধিক মিসাইল আঘাত হেনেছে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি কেন্দ্রগুলোতে। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে রাজধানী কিয়েভসহ প্রধান শহরগুলো। মঙ্গলবার হঠাত করেই যেনো রেগে গেলো রাশিয়া। মিসাইল ও ড্রোন নিয়ে বেছে বেছে ইউক্রেনের বিভিন্ন টার্গেট ধ্বংস করেছে দেশটি। এতে একজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। এছাড়া আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার অভিযোগও তুলেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো জানান, শহরের পেচেরস্ক এলাকার তিনটি ভবনে আঘাত হানা হয়েছে। এই হামলা এমন এক সময়ে হলো যখন ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন থেকে বিশ্ব নেতারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ অভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন। ঐ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ একটি বিমানে চড়ে বালি ছেড়ে যাওয়ার পর পর এই হামলা চলে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিবিসির খবরে জানানো হয়, বরাবরের মতো এবারও কিয়েভ অনেকগুলো মিসাইল ভূপাতিত করার দাবি করেছে। যদিও অন্তত ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানানো হয়েছে দেশটির তরফ থেকে।
এসব হামলার পর সারা দেশে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করা রয়েছে। মিকোলায়েভ ও ওডেসাসহ অন্য শহরেরও কয়েকদফা মিসাইল আক্রমণ হয়েছে। খারকভ ও লাভভ শহরেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। লাভভের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ চলে গেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, সারা দেশে রাশিয়া প্রায় ৮৫টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। আরও ২০টি আঘাত হানতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন। পরে রাতে অন্য এক আপডেটে ইউক্রেনীয় গণমাধ্যমগুলো একশ মিসাইল নিক্ষেপের কথা জানায়। চেরনিহিভের গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ চাউস মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে সতর্ক করে বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রয়েছে।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের তীব্র নিন্দা করে সেখানে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার বা ব্যবহারের হুমকিকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট পুতিনের পরিবর্তে ঐ সম্মেলনে যোগদানকারী রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো জি-২০ জোটের এই ইস্তাহারকে রাজনীতিকীকরণ করার চেষ্টা করেছে। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে এই সম্মেলনে বিশ্ব অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহের ওপর ইউক্রেন যুদ্ধের যে প্রভাব পড়েছে, তা ছিল আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয়। এর যে খসড়া ঘোষণাটি সাংবাদিকরা দেখেছেন তাতে বলা হয়, জি-২০’র টুয়েন্টির অধিকাংশ সদস্যই রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানের তীব্র নিন্দা করছে এবং সেখানে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার বা ব্যবহারের হুমকিকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে বর্ণনা করা হয়।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এ সম্মেলনে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে ভাষণ দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেন তার দেশের বিরুদ্ধে মস্কোর এ যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব এবং তা করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়াকে ইউক্রেনের সব ভূখ- থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও রাশিয়ার এই যুদ্ধের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে সরাসরি বলেছেন যে তার দেশের উচিত ইউক্রেন ত্যাগ করা। ল্যাভরভ দাবি করেন, ইউক্রেন নিজেই আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং অবাস্তব দাবিদাওয়া তুলছে। ফলে রাশিয়ার পক্ষে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।