‘এক কোটি ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ টাকা রেমিটেন্স এনে জেলায় সেরা হয়েছেন জরিব হোসেন সরকার’- মাইকে এমন ঘোষণার দিয়ে অতিথিদের কাছ থেকে ক্রেস্ট নিতে আহ্বান জানানো হয়। ক্রেস্ট নিতে আসা ব্যক্তিকে দেখে অনেকেই আবেগতাড়িত হলেন। জরিব হোসেন সরকার এলেন লুঙ্গি পরে।
জরিব হোসেন সরকার সাদাসিধে মানুষ। বিশ্বাসীও বটে! চার ভাতিজা, চার ভাগ্নে, দুই ছেলে ইসলামী ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তার কাছে ইরাক থেকে টাকা পাঠিয়েছেন। জরিব হোসেনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চর ইসলামপুর গ্রামে। বললেন, ‘বাড়ির মুরুব্বি হিসেবে সবাই আমার কাছে টাকা পাঠায়।’
‘মুজিববর্ষের আহ্বান, দক্ষ হয়ে বিদেশ যান’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে আন্তর্জাাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে জরিব হোসেনসহ তিনজন সেরা রেমিটেন্স গ্রহিতার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অন্য দু’জন সেরা রেমিটেন্স গ্রহণকারী হলেন, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী মধ্যপাড়ার মো. বকুল মিয়া (এক কোটি ৪১ লাখ টাকা) ও বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসিমা লুৎফুর রহমান (মোকাই আলী) (এক কোটি ২৫ লাখ টাকা)। সর্বোচ্চ ১৯ শত পাঁচ কোটি টাকার রেমিটেন্স এসেছে ইসলামী ব্যাঙ্কের মাধ্যমে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুক্রবার সকালে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার, বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসিমা লুৎফুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ট্যাকনিকেল ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) অধ্যক্ষ মো. আক্তার হোসেন, সোনালী ব্যাংকের এজিএম মো. শরীফুল ইসলাম প্রমুখ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, ‘প্রবাসী গমনের দিক থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অবস্থান দ্বিতীয়। মধ্যসত্বভোগী বা দালাল বা আদম বেপারীর খপ্পর থেকে সাবধান থাকতে হবে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রবাসী কল্যান ডেস্ক রয়েছে। প্রবাসীদের লাশ দ্রুত দেশে আনতে সরকার সহায়তা ডেস্ক খুলেছে। সরকার প্রতি বছর প্রতি উপজেলা থেকে এক হাজার করে দক্ষ কর্মীদের প্রবাসে পাঠানোর কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারিগারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নেওয়া ৪০ জনকে সনদ প্রদান ও অভিবাসী দিবস উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতায় তিন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা স্মারক এবং ওয়েজ আর্নার বোর্ড থেকে জেলার ১২৭জন অভিবাসী সন্তানকে এককালীন শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। শিক্ষাবৃত্তির মধ্যে পিএসসি শিক্ষার্থীদের ১৪ হাজার টাকা, জেএসসি শিক্ষার্থীদের ২০হাজার টাকা, এসএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ২৭ হাজার টাকা এবং এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ৩৪ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়। জেলায় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স গ্রহণকারী এবং সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আসার মাধ্যম হিসেবে ইসলামী ব্যাংক ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।