করোনাভাইরাস মহামারী এখনো ভয়াবহ রুপে রয়েছে। লকডাউন তুলে নিলে তা আবার ভয়াবহ রুপে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইয়েসাস।
আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় কোভিড-১৯ রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকার বিষয়েও সতর্ক করে সরকারগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভুল করা যাবে না। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দীর্ঘ সময় পৃথিবীর মানুষকে লড়াই করতে হতে পারে, কেননা এই রোগটি দীর্ঘ সময় আমাদের সঙ্গে থাকবে। বুধবার জেনেভায় নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে টেড্রোস এসব কথা বলেন। খবর বিবিসি ও সিএনবিসির।
টেড্রোস বলেন, শুরুর দিকে যেসব দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল, সেসব দেশের কয়েকটিতে এখন নতুন করে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের অনেক দূর যেতে হবে, এই ভাইরাস দীর্ঘসময় থাকবে আমাদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ঘরে থাকার আদেশ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করার জন্য নেওয়া পদক্ষেপের কারণেই সংক্রমণের হার কমে গেছে। কিন্তু ভাইরাসটি এখনও যথেষ্ট ভয়াবহ।
তিনি বলেন, শুরুর দিকে পাওয়া প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় যে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই এখনও ঝুঁকিতে রয়েছে, অর্থাৎ লকডাউন তুলে নিলে মহামারি আবারো ভয়াবহ রুপ নিতে পারে। তাই এখনই মানুষের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সরকারগুলো কোনো পদক্ষেপ নিলে তাই হবে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ববাসীকে সঠিক সময়ই এই মহামারি সম্পর্কে অবগত করতে পেরেছে বলে মনে করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, চীনের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বজুড়ে ‘স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ জারি করে এবং করোনার প্রাদুর্ভাবকে ১১ মার্চ মহামারি ঘোষণা করা হয়।
তবে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে অনেক দেশ সাধুবাদ জানালেও অনেকেই তাদের সমালোচনাও করেছে। বিশেষ করে সমালোচকদের দলে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অর্থবরাদ্দ বন্ধ করে দেবে। তার অভিযোগ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার পরিচয় দিয়েছে ও তথ্য গোপন করার চেষ্টা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমালোচনা করে বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি যে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি সময়মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানায়নি। আর নিয়ন্ত্রিত সংস্থা হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও পরিষ্কারভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে এই প্রথমবার তাদের কার্যক্রমের জন্য সমালোচনার মুখে পড়লো, তা নয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে তাইওয়ানের নেওয়া পদক্ষেপ প্রকাশ না করায় মার্চে অভিযোগ ওঠে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের প্রতি পক্ষপাতী। তাছাড়া অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, মাস্ক পরা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করেছে।