রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গ ছেড়েছে বিশ্বের নয়টি দেশ। আফ্রিকার এ দেশগুলো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের কর্ম অধিবেশনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পরিষদের তৃতীয় কমিটির প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এই প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেওয়া এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালে এ প্রস্তাবে এই নয়টি দেশ নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে ‘অ্যাবস্টেইন’ ভোট দিয়েছিল। কিন্তু গত ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে একেবারে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে সেই নয়টি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে ক্যামেরুন, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, নামিবিয়া, কেনিয়া, লেসেথো, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, পালাউ ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ।
এই নয়টি দেশসহ প্রস্তাবের পক্ষে মোট ১৩০ ভোট পড়েছে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরাসরি মিয়ানমারের পক্ষে ভোট দেয় নয়টি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে চীন, রাশিয়া, বেলারুশ, কম্বোডিয়া. ভিয়েতনাম, লাওস, ফিলিপাইন ও জিম্বাবুয়ে। এছাড়া ভোটদানে বিরত থেকেছে ভারত, জাপানসহ ২৫টি দেশ।
ভোটাভুটিতে ১৩০-৯ ভোটে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রস্তাবটি সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়েছে।
শনিবার পোস্ট করা সাবেক কফি আনান কমিশনের (রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে গঠিত জাতিসংঘ কমিশন) সদস্য লেটেশিয়া ভ্যান্ডেনের টুইট বার্তা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। পরে নিউইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে।
এদিকে মানবাধিকার প্রশ্নের এ প্রস্তাবকে পাশ কাটানোর কৌশল হিসেবে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে দেওয়া বার্তায় বলা হয়েছে, মিয়ানমার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
সাবেক আনান কমিশনের সদস্য ও ডাচ কূটনীতিক লেটেশিয়া ভ্যান্ডেন অ্যাসাম টুইট বার্তায় বলেছেন, এই নয়টি দেশ ২০১৯ সালে দেওয়া এই প্রস্তাব প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। এবার এই নয়টি দেশ তাদের অবস্থান বদলে সরাসরি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এবং প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, গত নভেম্বরে সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘু গোষ্ঠিগুলোর মানবাধিকার প্রশ্নে এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। মিয়ানমারের বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।
বছরের শেষ কার্যদিবেসে গত বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি সিদ্ধান্ত আকারে গ্রহণ করার প্রসঙ্গ এলে মিয়ানমার আবার বিরোধিতা করে এবং ভোটাভুটির আহ্বান জানায়। মিয়ানমারের দাবিতেই ভোটাভুটি হয়। ভোটাভুটিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে আরও বেশি ভোট পড়ে।
আগেরবার কার্যত ভোটদানে বিরত থাকা আফ্রিকার নয়টি দেশ এবার সরাসরি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়, যা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গেছে। এদিকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি কিয়াউ মো তুনের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলা হয়েছে, মিয়ানমার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক চাপ সৃস্টির ফল ভালো হবে না। এ প্রস্তাব মিয়ানমার মেনে নেবে না এবং রাখাইন রাজ্যের সংকট সমাধানে কাজে আসবে না।