ভারতের দিল্লিতে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভিন্ন সুর শোনা গেলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের দুই মন্ত্রণালয়ের কথায়। দেশটির নগরোন্নয়ন মন্ত্রী যেখানে দাবি করেছিলেন, রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট প্রদান করা হচ্ছে; সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হলো, তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ের তরফে বলা হয়েছে, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংবাদমাধ্যমের একটি অংশে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে স্পষ্টভাবে জানানো হচ্ছে, নয়াদিল্লির বক্করওয়ালায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর কোটায় রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট প্রদানের কোনও নির্দেশ দেয়নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রোহিঙ্গাদের নতুন জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল দিল্লি সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে আলোচনা করায় তাদের বর্তমান জায়গায় রাখতেই দিল্লি সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’
যদিও বুধবার সকালেই ভিন্ন কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে তিনি দাবি করেছিলেন, ‘যারা ভারতে শরণার্থী হিসেবে থাকতে চেয়েছেন, তাদের সর্বদা স্বাগত জানানো হয়েছে। এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে দিল্লির বক্করওয়ালা এলাকায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর কোটার ফ্ল্যাটে সব রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবেে। তাদের (জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয়) প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধা, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রশংসাপত্র দেওয়া হবে। ২৪ ঘণ্টা দিল্লি পুলিশের সুরক্ষা দেওয়া হবে।’ ওই টুইটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কেও ট্যাগ করেছিলেন পুরী।
হিন্দুস্তান টাইমস এ খবর দিয়ে জানায়ঃ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পুরীর এমন ঘোষণার পরই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) তোপের মুখে পড়ে নরেন্দ্র মোদী সরকার। হিন্দুত্ববাদীদের সংগঠনের তরফে বলা হয়, ‘আমরা পুরীকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে ২০২০ সালে সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিবৃতি দিয়েছিলেন যে রোহিঙ্গাদের কখনও ভারতে মেনে নেওয়া হবে না।’ সেই সঙ্গে এটাও বলা হয়, ‘পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীরা দিল্লির মজনু-কা-টিলায় ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে বসবাস করছেন। যা এই বিষয়টি (রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার পরিকল্পনাা) আরও জটিল করে তুলেছে।’ সেই পরিস্থিতিতে ‘রোহিঙ্গাদের বাড়ি দেওয়ার পরিবর্তে তাদের ভারতের বাইরে পাঠানোর জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়ার’ আর্জি জানানো হয়।
ভিএইচপি’র তোপের কিছুক্ষণ পরই অবশ্য রোহিঙ্গাদের ‘অবৈধ বিদেশি’ হিসেবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে বলা হয়েছে, ‘আইন মোতাবেক (নিজেদের দেশে) ফেরত পাঠানো পর্যন্ত অবৈধ বিদেশিদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখতে হবে। বর্তমানে যেখানে (রোহিঙ্গারা) থাকেন, সেটাকে এখনও ডিটেনশন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেনি দিল্লি সরকার। অবিলম্বে ওই জায়গাকে ডিটেনশন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’