টাঙ্গাইলে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর জাকিয়া সুলতানা রুপাকে গণধর্ষণের পর হত্যা মামলার দ্রুত বিচারের দাবিতে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে প্রতীকী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন রুপার পরিবারের সদস্যরা।
রুপার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ বুধবার দুপুরে রুপার মা হাসনা হেনা, দুই ভাই হাফিজুর প্রামানিক ও রুম্মান প্রামানিক উজ্জল ও তার স্ত্রী টুম্পা তাড়াশ উপজেলা পরিষদের শহীদ মিনার চত্বরে দাঁড়িয়ে প্রতীকী মানববন্ধন পালন করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রুপার মাসহ পরিবারের সদস্যরা অঝোরে কাঁদেন।
রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, গত চার বছরেও তাদের পরিবার রুপা হত্যার বিচার না পেয়ে পরিবারসহ সচেতন দেশবাসী হতাশ হয়েছে।
এ সময় তিনি আরো বলেন, আমার সম্ভবনাময় মেধাবী বোন রুপার অকাল মৃত্যু হয়েছে। আমার একমাত্র কর্মক্ষম বোন রুপাকে হত্যা করায় আমরা অর্থনৈতিক দৈন্যতায় পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। বার বার হত্যা মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানালেও তা পূরণ হয়নি। গত সাড়ে তিন বছর যাবৎ হাইকোর্টে আপিল শুনানি ঝুলে আছে।
রুপার বৃদ্ধ মা হাসনা হেনা বলেন, চাঞ্চল্যকর এই হত্যার বিচারের মাধ্যমে দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন হওয়া জরুরি। যাতে দেশের আর কোনো মায়ের যেন বুক খালি না হয়। মেয়ে হারানোর বেদনা যে কতো কঠিন সেটা আমিই বুঝি।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা শেষে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসান বাড়ি গ্রামের মৃত জেলহক প্রাং এর মেয়ে রুপাকে চলন্তবাসে গণধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করে পরিবহণ শ্রমিকরা। পরে চলন্ত বাসেই তাকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুরের পঁচিশ মাইল নামক এলাকায় বনের মধ্যে তার মরদেহ ফেলে দেওয়া হয়। এলাকাবাসীর কাছে খবর পেয়ে মধুপুর থানা পুলিশ সে রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় নারী হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় গণধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরদিন পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে তার ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় গিয়ে ছবির ভিত্তিতে ছোট বোন রুপার লাশ শনাক্ত করেন। ২৮ আগস্ট এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ময়মনসিংহ-বগুড়া সড়কের ছোয়া পরিবহণের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫) ও সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা প্রত্যেকেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এরপর নিম্ন আদালতে ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ৪ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ১ জনের ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হওয়ার পর তারা জেলে রয়েছেন। তাছাড়া ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আসামিরা খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। এরপর গত ৪২ মাসেও চাঞ্চল্যকর রুপা গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার আপিল শুনানি শুরুই হয়নি।