প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (৪ মার্চ) বিকেলে কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যত দ্রুত শেষ হবে ততই জনগণের জন্য মঙ্গলজনক হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব যত দ্রুত সম্ভব চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের নাগরিকরা যাতে তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে পারে সেজন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানান। ভাসানচরে ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের বিষয়ে তার সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবকে আরো রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তর করতে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ মহাসচিব উভয়েই একমত হয়েছেন যে, সেখানে রাজনৈতিক অঙ্গনে কোনো পরিবর্তন আসুক বা না আসুক রোহিঙ্গাদের শিগগিরই মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে।
বৈঠকে আন্তোনিও গুতেরেস উন্নয়ন, কূটনীতি এবং কভিড মহামারি মোকাবেলায় অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্বের জন্য তারা গর্বিত যিনি কভিড-১৯ পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাববেলা করেছেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সংকট মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) প্রেসিডেন্ট সাবা করোসির সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা বৈঠকে সাউথ-সাউথ দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করে একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম গঠনের প্রস্তাব করেন। যাতে উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি অনুয়ায়ী সেভাবে সাহায্য না করলেও জনগণের কল্যাণে সম্ভাবনা ও করণীয় খুঁজে পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি এক দিনের জন্য এই বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সহযোগিতা কামনা করেন।
জবাবে, ইউএনজিএ সভাপতি পরবর্তী সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের আগে এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে অভিমত দিয়ে বলেন, তারা আগামী জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক সমাবেশের কাজের জন্য নিযুক্ত থাকবেন।
বৈঠকে ইউএনজিএ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এটিকে ‘একটি অলৌকিক ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেন।
দুই নেতা পানি ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়েও আলোচনা করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে ৫ম জাতিসংঘ সম্মেলনে (এলডিসি ৫ : সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি) যোগ দিতে কাতারের রাজধানী দোহা পৌঁছান।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইট (বিজি-৩২৫) শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিট দোহারের হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
কাতার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি এবং কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে একটি আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রায় শেখ হাসিনাকে বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর বাসস’র।