ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রাফার তাল আস-সুলতান, সৌদি, তাল জারুব এবং আল-হাশাশিন এলাকায় বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে নির্বিচার বোমা হামলা এবং গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে বহু ফিলিস্তিনির হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহতে একটি নিরাপদ অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের একটি ক্যাম্পে বোমা হামলা চালায়। এতে ৪৫ জন নিরাপরাধ ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এই হামলায় আন্তর্জাতিক ক্ষোভ উপচে পড়েছে। রাফায় আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েলের এমন প্রাণঘাতী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক, মিসর, নরওয়ে, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। পাশাপাশি শহরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে তারা।
রাফাহ শহরের তাল আল সুলতান এলাকায় শরণার্থীশিবিরে বাস্তুচ্যুত লোকজন আশ্রয় নিয়েছিল।
স্থানীয় সময় গত রবিবার রাতে পাওয়া ভিভিও ফুটেজে ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাটিতে বিস্ফোরণ ও তীব্র আগুন জ্বলতে দেখা যায়। রাফায় এমন ভয়াবহ তাণ্ডব চালানোর কয়েক ঘণ্টা আগে শহরটি থেকে তেল আবিবে দীর্ঘ পাল্লার রকেট হামলা চালিয়েছিল হামাস।
এই নারকীয় হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে বেঁচে যাওয়া লোকজন জানায়, ইসরায়েলের বোমার আগুনে মানুষ জীবন্ত ঝলসে গেছে। এদিকে জাবালিয়া, নুসাইরাত ও গাজা সিটিতেও ইসরায়েলের হামলায় ১৬০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
তাল আল সুলতান এলাকায় শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলের ‘হত্যাযজ্ঞ’ থেকে বেঁচে যাওয়া এক গাজাবাসী জানান, এই হামলায় তিনি তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হারিয়েছেন। মাজেদ আল আত্তার নামের ওই ব্যক্তি জানান, তাঁরা গাজার বেইত লাহিয়া এলাকা থেকে রাফায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁবুতে বসে ছিলাম। আচমকা শিবিরে বোমবর্ষণ শুরু হয়। এই হামলায় আমার পরিবারের সদস্যরা জীবন্ত ঝলসে গেছে মৃতদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা নারীও ছিলেন।’ আত্তার বলেন, গাজায় এখন কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। সবখানেই হত্যাযজ্ঞ চলছে।
রাফায় শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলের নির্মম হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান বলেছেন, রাফায় ভয়াবহ হামলার জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে জবাবদিহি করতে তার দেশ সব চেষ্টা চালাবে।
রাফায় হামলার নিন্দা জানিয়ে কাতার একে আন্তর্জাতিক আইনের গভীর লঙ্ঘন বলে বর্ণনা করেছে। এতে গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট আরো তীব্র হবে বলে দেশটি উদ্বেগ জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ জানায়, গাজা যে পৃথিবীতে একটি নরকে পরিণত হয়েছে, রাফার চিত্র তারই আরেকটি প্রমাণ।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বরাতে ওয়াফা নিউজ এজেন্সি জানায়, রাফায় শরণার্থীশিবিরের তাঁবুগুলোতে লোকজন জীবন্ত পুড়ে মরেছে। মিসর, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও ফ্রান্স রাফায় শরণার্থীশিবিরে হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
জাতিসংঘের সাহায্য প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, ‘রাফাহ হামলা একটি দুঃখজনক ভুল এবং ঘটনাটি সম্ভবত সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও জঘন্য।’
এদিকে ইসরায়েলের শীর্ষ সামরিক প্রসিকিউটর রাফাহ হামলাকে খুব গুরুতর বলে বর্ণনা করেছেন এবং এ ঘটনার তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তারা হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
রাফার বাকি দুটি হাসপাতালের একটি ইসরায়েলি হামলার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বলে হাসপাতালটির পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেছেন। ইসরায়েলি গোলাগুলিতে হাসপাতালের দুই মেডিকেল কর্মী নিহত হওয়ার জেরে এটি বন্ধ করা হয়। এদিকে মধ্য গাজার আল-আকসা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন শত শত ফিলিস্তিনি। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্মুখীন হয়েছে এবং রোগীরা মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিচারালয় (আইসিজে) রাফায় অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার দুই দিন পরই শহরটিতে এমন নারকীয় হামলা চালাল ইসরায়েলি বাহিনী। গত ৭ মে ইসরায়েল রাফায় হামলা শুরু করার পর শহর ছেড়ে আট লাখের বেশি মানুষ পালিয়েছে। তবে এখনো সেখানে বহু মানুষ রয়ে গেছে। কেননা ইসরায়েল গাজার সব জায়গাতেই হামলা চালাচ্ছে। সেখানে কোনো নিরাপদ স্থান নেই।