রাতে হঠাৎ শ্বাসকষ্টে জেগে উঠছেন, কার্ডিয়াক অ্যাজমায় ভুগছেন না তো?

অনেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগেন কিন্তু তারা জানেন না এটা কার্ডিয়াক অ্যাজমা কি না। এই সমস্যাটা অনেক সময় ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। কার্ডিয়াক অ্যাজমা সাধারণ অ্যাজমার মতো নয়,এটি মূলত হৃদযন্ত্রের জটিলতার কারণে ফুসফুসে পানি জমে সৃষ্ট এক ধরনের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। চিকিৎসকদের মতে, বাম দিকের হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমে গেলে ফুসফুসে চাপ বৃদ্ধি পায়, ফলে এই সমস্যা দেখা দেয়।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা কার্ডিয়াক অ্যাজমার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সাধারণ বা ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা মূলত ফুসফুসের প্রদাহজনিত সমস্যা, যা ধুলো, ধোঁয়া বা অ্যালার্জির কারণে শ্বাসনালী সংকুচিত হলে ঘটে। অন্যদিকে, কার্ডিয়াক অ্যাজমার মূল কারণ হৃদরোগ বিশেষ করে কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউর। এতে ফুসফুসে তরল জমে শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং হুইজিংয়ের মতো উপসর্গ দেখা দেয়।

ঝুঁকির কারণ: চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যেসব বিষয় কার্ডিয়াক অ্যাজমার ঝুঁকি বাড়ায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তচাপ
  • ডায়াবেটিস
  • হার্ট ভালভের অসুস্থতা
  • এঞ্জাইনা বা বুকে ব্যথা
  • পূর্বে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস

 লক্ষণ যেগুলোতে সতর্ক হবেন:অনেকেই কার্ডিয়াক অ্যাজমার উপসর্গকে সাধারণ অ্যাজমা ভেবে ভুল করেন। তবে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত—

  • রাতে হঠাৎ শ্বাসকষ্টে ঘুম ভেঙে যাওয়া
  • কাশি বা কাশির সঙ্গে রক্ত আসা
  • হুইজিং বা সিসি ধরনের শব্দ হওয়া
  • সামান্য পরিশ্রমেও হাঁপিয়ে যাওয়া

চিকিৎসা: কার্ডিয়াক অ্যাজমার চিকিৎসা সাধারণ অ্যাজমার থেকে আলাদা। এতে মূলত হৃদযন্ত্রের চিকিৎসাই প্রাধান্য পায়। চিকিৎসকরা নিয়মিত ব্যায়াম, কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন, এবং প্রয়োজনে আধুনিক ডিভাইস যেমন ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিওভার্টার ডিফিব্রিলেটর, বাইভেন্ট্রিকুলার পেসমেকার বা লেফট ভেন্ট্রিকুলার অ্যাসিস্ট ডিভাইস ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

 

প্রতিরোধের উপায়: কার্ডিয়াক অ্যাজমা প্রতিরোধে হৃদরোগের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা সবচেয়ে জরুরি। এজন্য—

  • রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা
  • নিয়মিত শরীরচর্চা করা
  • ধূমপান ও মাদক সম্পূর্ণ পরিহার করা প্রয়োজন।

চিকিৎসকরা মনে করিয়ে দেন, কার্ডিয়াক অ্যাজমা শুধুমাত্র ফুসফুসের নয়, এটি হৃদরোগের একটি গুরুতর ইঙ্গিত। তাই উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই ভালো।