রাজস্ব আদায়ে বড় ধাক্কা খেল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১০ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই–ডিসেম্বরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আয় হয়েছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আয় কমেছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বা ৬ শতাংশ। রাজস্ব কর্মকর্তারা বলছেন, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা–বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়। প্রভাব পড়ে রাজস্ব আদায়ে।
গত ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ের যে চিত্র, তাতে চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ বা সাড়ে ৩২ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এনবিআরের।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে শুল্ক-কর আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। গত জুলাই-ডিসেম্বরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। আর আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-ডিসেম্বর মাসে আমদানি, ভ্যাট ও আয়কর—এই তিন খাতের মধ্যে কোনোটিতেই ছয় মাসের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে। এ খাতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ছিল ৭৬ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। তার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।
অন্যদিকে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি খাতে ৬১ হাজার ৯৫২ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে ৪৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। গত জুলাই-ডিসেম্বরে ভ্যাট বাবদ আদায় হয়েছে ৫৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। এ সময়ে এ খাতে ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৬ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত রাজস্ব খাত সংস্কারের পরামর্শক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরুর দুই মাস দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। তাতে ব্যবসা–বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়। এ কারণে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট আদায়ও বিঘ্নিত হয়েছে। আয়করও কম আদায় হয়েছে। এসব কারণে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে।