রাজধানীতে সড়কের দুপাশে তারের জঞ্জাল, বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি

রাজধানীর প্রায় সব সড়কের দুপাশেই তারের জঞ্জাল। ইন্টারনেট, ডিশ, টেলিফোন, লাইনগুলো জড়িয়ে আছে একসঙ্গে। বছরের পর বছর এসব তার জমে রূপ নিয়েছে স্তূপে। ফলাফল- যেকোনো দুর্যোগে আধুনিক যন্ত্র থাকার পরেও সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে পারে না ফায়ার সার্ভিস। বছরের পর বছর এসব অপসারণ নিয়ে কথা হলেও তারের জঞ্জাল থেকে মুক্ত হচ্ছে না রাজধানী। কবে এ সংকট নিরসন হবে, জানেনা কেউ।

২০২৪ এর ২৯ ফেব্রুয়ারি। আগুন লাগে বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে। সময়মতো ফায়ার সার্ভিস পৌঁছালেও সড়কে ছড়িয়ে থাকা তারের জঞ্জালে ব্যাহত হয় উদ্ধার অভিযান। বাড়ে ক্ষতির পরিমাণও।

এ ধরনের আরও দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে নগরীতে। মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা তারের জঞ্জাল ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে নগরজীবন। চলার পথে বৈদ্যুতিক ও সড়কবাতির খুঁটির গা ঘেঁষে ঝুলছে জটলা পাকানো এসব তার। জানালার পাশে কিংবা রাস্তার উপরে ডিশ, টেলিফোন এবং ইন্টারনেটের তার পেঁচিয়ে তৈরি হয়েছে এক ভয়ংকর অবস্থা। এমন বাস্তবতায় একদিকে বেড়েছে ঝুঁকি, ঘটছে সৌন্দর্যহানিও।

নগরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এসব তারের জঞ্জালের সঙ্গে প্রতিনিয়তই যুদ্ধ করতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা এসব তার ছিঁড়ে কখনো কখনো ঘটে দুর্ঘটনা।

ফায়ার সার্ভিস ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মো. ছালেহ্ উদ্দিন বলেন, ‘যখন কোনো অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে তখন আমরা গাড়ি নিয়ে গেলে যাবার পথেও কিন্তু এসব ক্যাবল আমাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যেহেতু আমাদের গাড়িরগুলো হাইট কিন্তু সাধারণ গাড়ি চেয়ে কিছুটা বেশি। এমন অবস্থায় আমাদের কিন্তু ওইসব তার কেটে যেতে হয়।’

ক্যাবল অপারেটর কিংবা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের সংগঠনগুলো এই জঞ্জালের দায় নিতে নারাজ। চাপিয়ে দেন বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতার ওপর।

আইএসপিএবি এর সভাপতি মো. ইমদাদুল হক। ছবি: সংগৃহীত

আইএসপিএবি এর সভাপতি মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘অ্যাকটিভ শেয়ারিং মানে আমরা ১০০ আইএসপি আমরা ১ টা ক্যাবলের মাধ্যমে সেবা দেব। যখন এই ১০০ আইএসপি ১ টা ক্যাবল দিয়ে গ্রাহকে দোরগোড়ায় পৌঁছাবো তখন কিন্তু আমাদের বিটিআরসি বা সরকারের একটা অনুমোদন দরকার হয়। এই অ্যাকটিভ শেয়ারিং অনুমোদন এখন নাই বলেই আমাদের পৃথকভাবে একটি একটি করে ক্যাবল টানতে হচ্ছে।’

নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও তারের জঞ্জাল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না রাজধানীবাসী। কবে হবে সংকট নিরসন? কে নেবে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ?

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে আমরা একটা ওয়ার্ডে এই কাজগুলো শুরু করব। এখানে চেষ্টা করা হবে কীভাবে আমরা মাটির নিচ দিয়ে তারগুলোকে নেয়া যায় এবং উপরে যেন ঝুলানো তার না থাকে। এই ফলাফল দেখে হয়ত আমরা অন্যান্য জায়গায় এটি প্রয়োগ করব।’

নগরবিদরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বয়হীনতা আর সদিচ্ছার অভাবে নিরাপদ নগরী গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান। ছবি: সংগৃহীত

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের অধীনে সকল সেবা সংস্থাকে কাজ করার কথা। সেটা না হওয়ায় কিন্তু যত ধরনের বিপত্তি তৈরি হয়েছে। অবশ্যই সিটি করপোরেশনে লীড নিতে হবে এবং অন্য যত ধরনের সেবা সংস্থা আছে তাদেরকে সে লীড মানতে হবে। কিন্তু কেউ কাউকে মানবো না এটা যদি চলতে থাকে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির সঙ্গে প্রচুর হতাহতের ঘটনা আগেও ছিল সামনেও আরো বাড়বে।’

Comments (0)
Add Comment