রাজদায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন নরওয়ের রাজকুমারী মার্থা লুইস (৫১)। হবু স্বামী ডুরেক ভেরেটের সঙ্গে যৌথভাবে বিকল্প ওষুধ ব্যবসায় মনোনিবেশ করার জন্য তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। ডুরেক একজন স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু (শামন)। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ডেইলি টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজকুমারী মার্থা তার শুধু রাজ উপাধি রেখেছেন। শুধু ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসা করবেন বলে রাজদায়িত্ব ত্যাগ করেছেন। তার হবু স্বামী ডুরেক ক্যানসারসহ চিকিৎসাক্ষেত্রের নানা বিষয় নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
নরওয়ের রয়্যাল হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, রাজকুমারী মার্থা লুইস বিকল্প ওষুধ ব্যবসায় মনোনিবেশ করবেন বলে রাজ পরিবারের সরকারি দায়িত্ব ও তার ব্যক্তিগত দায়িত্বের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করতে রাজদায়িত্ব ত্যাগ করেছেন।
তবে রাজা পঞ্চম হ্যারল্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মার্থার রাজ উপাধি আগের মতোই থাকবে। এরআগে মার্থা যত্নের সঙ্গে তার রাজদায়িত্ব পালন করেছেন।
মার্থার হবু স্বামী ডুরেককে একজন দুর্দান্ত মানুষ হিসেবে বর্ণনা করে রাজা পঞ্চম হ্যারল্ড জানান, তার সঙ্গে থাকা খুব আনন্দের। তার ভেতরে হাস্যরস আছে। এই কঠিন সময়েও তার কারণে সবাই মন খুলে হাসতে পেরেছেন।
তার সঙ্গে রাজপরিবারের বোঝাপড়াটা দারুণ হয়েছে বলে ধারনা করেন রাজা। যেকোনো বিষয়ে তারা ডুরেকের সঙ্গে সহজেই দ্বিমত বা সম্মতি পোষণ করতে পেরেছেন।
এক বিবৃতিতে রাজকুমারী মার্থা জানান, তিনি গবেষণাভিত্তিক জ্ঞানের গুরুত্বের বিষয়ে বেশ সচেতন। তিনি বিশ্বাস করেন তার বিকল্প ওষুধ প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থায় সহায়তা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিপূরক হয়ে উঠবে। একজন আলাদা ব্যক্তি ও রাজ পরিবারের সদস্য হিসেবে নিজের মধ্যে পার্থক্য করা খুব জরুরি ছিল।
রাজকুমারী মার্থা কয়েক দশক ধরে বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থায় জড়িত থেকে নানা বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। এরমধ্যে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে মানুষকে তাদের দেবদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও ছিল। তার বিরুদ্ধে রাজ উপাধি ব্যবহার করে নানা সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
২০০২ সালে নরওয়েজিয়ান লেখক ও শিল্পী আরি বেহনকে বিয়ে করেন রাজকুমারী মার্থা। এই দম্পতির তিন কন্যাসন্তান আছে। ২০১৭ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বিষণ্ণতায় ভুগে ২০১৯ সালের বড়দিনে আরি বেহন আত্মহত্যা করেন।
গত জুনে ডুরেকের সঙ্গে রাজকুমারী মার্থার সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে ইনস্টাগ্রাম পোস্টে মার্থা তাদের সম্পর্কের বিষয়ে জানিয়েছিলেন।
ইনস্টাগ্রাম পোস্টে মার্থা বলেছিলেন, ‘আপনাদের মধ্যে যারা সমালোচনা করেন, তারা এবার লাগাম টানুন। আমার জন্য কী ভালো, কী মন্দ, তা আপনাদের বিচারের ওপর নির্ভর করে না। মানুষ হিসেবে ডুরেকের সঙ্গে আমি সময় কাটাতে ভালোবাসি।’
ডুরেক ভেরেট আফ্রো-আমেরিকান। তিনি নিজেকে ‘ষষ্ঠ প্রজন্মের আধ্যাত্মিক গুরু’ হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি মৃত ব্যক্তিদের থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন বলে দাবি করেন। যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেন হামলার দুই বছর আগেই তিনি এর পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। ডুরেক ভেরেটের নিজস্ব ওয়েবসাইটে তিনি নিজেকে ‘বর্তমান যুগের স্বপ্নদর্শী’ হিসেবে বর্ণনা করে জানান, তিনি আধ্যাত্মিকতাকে রহস্যময় করে তোলেন।