মুখ দেখে বোঝা যায় এটি এক নারীর মমি। যদিও সুদৃশ্য এই মমির বাক্সের গায়ে নারীর নাম লেখা নেই, কিন্তু এর কাঠামোটি যে ধাঁচে তৈরি করা হয়েছিল, তা দেখে অনুমান করা যায় যে, ওই নারী ছিলেন উচ্চবংশীয়।
জানা যায়, মিশরের প্রাচীন দেবতা আমুনের মন্দিরে মাঝেমধ্যেই সঙ্গীতের অনুষ্ঠান হত। সে সব অনুষ্ঠানে যেসব নারী অংশগ্রহণ করতেন। তাদের মৃত্যুর পর মমি করে রাখা হতো। এই মমির বাক্স যেভাবে তৈরি করা হত, ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রাখা মমির বাক্সের গঠনও ঠিক তেমন ছিল।
মমিটি মিশরের প্রাচীন দেবতা আমুনের এক ভক্তের।৯৫০ থেকে ৯০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে তৈরি করা হয়েছিল ব্রিটিশ মিউজিয়ামের মমিটি। পর্যটকদের দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ১৯৯০ সাল থেকে মমিটিকে মিউজিয়ামের ‘ফার্স্ট ইজিপশিয়ান রুম’-এ রাখা হয়েছিল। অনেক কারণেই মমিটিকে অভিশপ্ত মমি মনে করা হয়। টাইটানিক ডুবে যাওয়ার জন্য দায়ী করা হয় একে। একবার এক গবেষক এই মমি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে জীবন হারান। ওই গবেষকের নাম বার্টরাম ফ্লেচার রবিনসন। শোনা যায় যে, এই মমি যে অভিশপ্ত, তা নাকি বুঝতে পেরেছিলেন বার্টরাম। কিন্তু তার গবেষণা সংক্রান্ত কাজ প্রকাশ পাওয়ার আগেই মারা যান বার্টরাম।
মমিটিকে অভিশপ্ত মনে করার বড় কারণ তৈরি হয় ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে। সেদিন উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে তলিয়ে গিয়েছিল টাইটানিক। সেই ঘটনায় নিহত হন ১৫০০ যাত্রী। শোনা যায় যে, উইলিয়াম টি স্টিড নামে এক যাত্রী টাইটানিকে ছিলেন। তিনি নাকি অন্য যাত্রীদের জানিয়েছিলেন টাইটানিকে একটি মমি আছে। টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পর এই কথা লোকমুখে ছড়িয়ে যায়। অনেকে মনে করেছিলেন যে, জাহাজের ভেতর মমি ছিল বলেই তার অভিশাপে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
মমিটির আসল কাহিনি একেবারে আলাদা। মমিটি মিশরের প্রাচীন দেবতা আমুনের এক ভক্তের। লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এই মমিটি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল।লন্ডনের হল্যান্ড পার্কের বাসিন্দা ওয়ারউইক হান্ট ১৬২ সেন্টিমিটার লম্বা মমির বাক্সটি ১৮৮৯ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে দান করেছিলেন। একাংশের দাবি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে ব্রিটিশ মিউজিয়াম থেকে মমি অন্য জায়গায় সরানো হয়েছিল বলে জানা যায়। তারপর আবার ব্রিটিশ মিউজিয়ামে তা ফিরিয়ে আনা হয়।
বর্তমানে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ৬২ নম্বর ঘরে সংরক্ষিত রয়েছে মমিটি। তবে এই মমি আদৌ অভিশপ্ত কিনা, সেই রহস্যের এখনও রহস্যই রয়ে গেছে।