গুনাহ বা পাপ মানুষকে মহান রবের রহমত থেকে বঞ্চিত করে। সেই সঙ্গে এটি ধীরে ধীরে মানুষকে পাপাচারের দিকে ধাবিত করে। হাদিসে এসেছে, মানুষ তার পাপকাজের কারণে তার প্রাপ্য রিজিক থেকেও বঞ্চিত হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৪০২২)
তবে মহান আল্লাহ পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু। যার ফলে তিনি বান্দার অনেক গুনাহ বা পাপই ক্ষমা করে দেন। পবিত্র কুরআনে খোদ মহান রাব্বুল আলামিন ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আর তোমাদের প্রতি যে মুসিবত (বিপদ) আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত: ৩০)
পরকালে সফল হতে তাই ক্ষণস্থায়ী এই পৃথিবীতে পাপ বা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। সেই সঙ্গে উত্তম আমল করাও আবশ্যক। কারণ, বান্দার আমলেই নির্ধারণ হবে পরকালে তার ঠিকানা চিরশান্তির জান্নাত নাকি জাহান্নাম। এজন্য ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে নানাভাবেই মহান রব বান্দার পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। তবে যারা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন এবং কুরআনের নির্দেশনা ও নবীজির (সা.) আদেশ-নিষেধ অনুসরণের পাশাপাশি তার আদর্শকে ধারণ করে জীবন পরিচালনা করতে পারবেন, তারাই আখিরাতে সফল হবেন।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘জমিনের ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোর শোভাবর্ধন করেছি, যাতে আমি মানুষকে পরীক্ষা করতে পারি যে, আমলের ক্ষেত্রে কারা উত্তম’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৭)। তবে পাপ থেকে বেঁচে থেকে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলে আখিরাতে এর উত্তম প্রতিদানের সুখবরও রয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তাদের সুসংবাদ দাও, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তারা জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানে হবে স্থায়ী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৮২)
অন্যদিকে গুনাহ বা পাপ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারেও পবিত্র কুরআনে কঠোর বার্তা এসেছে। এমনকি এর জন্য ভয়ংকর শাস্তির কথাও এসেছে। পবিত্র কুরআনে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘গুরুতর শাস্তির আগে আমি তাদেরকে অবশ্য অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাবো, যাতে তারা (অনুশোচনা নিয়ে) ফিরে আসে। (সুরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ২১)
এ ক্ষেত্রে এমন কিছু গুনাহ বা পাপ রয়েছে যেগুলোর জন্য আখিরাতে শাস্তি তো আছেই, দুনিয়াতেও এর জন্য শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। এরমধ্যে দু’টি পাপ হলো বিদ্রোহ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা। এই দুই পাপের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তির কথা হাদিসে এসেছে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- বিদ্রোহ ও আত্মীয়তা-বিচ্ছেদ ব্যতীত এমন কোনো গুনাহ বা পাপ নেই, যার শাস্তি আল্লাহ আখিরাতে দেয়া সত্ত্বেও দুনিয়াতে দেন (কারণ, এ দু’টি গুনাহ হলো কবীরা গুনাহ, যার শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ দেবেন)। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮২২)
মনে রাখতে হবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে হাদিসে কঠোর নিষেধ রয়েছে। কারণ, এর সম্পর্ক আল্লাহর আরশের সঙ্গে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- রেহম (আত্মীয়তার সম্পর্ক) আল্লাহর আরশের সঙ্গে ঝুলন্ত রয়েছে। সে বলে, যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে, আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন। আর যে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৪৭১, ৫৫৬২; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬২৮৮)