যে কারণে ৩ নভোচারীর সঙ্গে মহাকাশ স্টেশনে ইঁদুর পাঠাল চীন

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জিউকুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টার থেকে লং মার্চ-২এফ রকেটের সাহায্যে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) শেনঝৌ-২১ মহাকাশযান সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।

এই অভিযানে চীনের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী নভোচারীসহ তিন সদস্যের একটি নভোচারী দল তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনে পাঠিয়েছে দেশটি। তারা হলেন ৩৯ বছর বয়সী ঝাং হংঝাং এবং ৩২ বছর বয়সী উ ফেই।

তবে অভিযানে মহাকাশ স্টেশনে শুধু তিন নভোচারীই রওনা হননি। তাদেরর সঙ্গে মহাকাশ স্টেশনে চারটি কালো জাতের ইঁদুর পাঠিয়েছে চীন। চারটি ইঁদুরের মধ্যে দুটি স্ত্রী এবং দুটি পুরুষ। এগুলো পাঁচ থেকে সাত দিন ধরে শেনঝো-২১ মহাকাশযানে থাকবে।

চীনের মহাকাশ স্টেশনে এই প্রথম কোনো ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী নেওয়া হলো। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে প্রাণীর প্রজনন প্রক্রিয়া নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যই এই ইঁদুরগুলোকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। শেনঝৌ-২১ নামের মহাকাশযানে করে চীনের তৈরি মহাকাশ স্টেশন তিয়ানগংয়ে ইঁদুরগুলো পৌঁছানো হয়।

তিয়ানগং-এ তাদের সপ্তাহব্যাপী অবস্থানের সময়, তাদের নড়াচড়া, খাওয়া এবং চাপের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করার জন্য বহুমাত্রিক ভিডিও ইমেজিংয়ের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে। কক্ষপথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে ইঁদুরগুলোড় আবার শেনঝো-২০ মহাকাশযানের মাধ্যমে পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা রয়েছে।

এদিকে, উ ফেই চীনের ইতিহাসে মহাকাশে পাঠানো সবচেয়ে তরুণ মহাকাশচারী হিসেবে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। তারা দুজনই ২০২০ সালে এই মহাকাশ কর্মসূচির জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০২২ সালে স্থায়ীভাবে বসবাসযোগ্য অবস্থায় গড়ে ওঠা চীনের মহাকাশ স্টেশনে এটি সপ্তম মানববাহী মিশন।

শেনঝৌ সিরিজের মহাকাশযানগুলোতে সাধারণত তিনজন মহাকাশচারী ছয় মাসের জন্য মহাকাশে অবস্থান করেন। এই কর্মসূচিতে অভিজ্ঞ মহাকাশচারীদের পাশাপাশি ক্রমে তরুণ প্রজন্মকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

এই মিশনের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অভিজ্ঞ মহাকাশচারী ঝাং লু (৪৮), যিনি এর আগে ২০২২ সালের শেনঝৌ-১৫ অভিযানেও অংশ নিয়েছিলেন।

শেনঝৌ-২১ অভিযানের নভোচারীরা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন শেনঝৌ-২০ দলের কাছ থেকে, যারা ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে ‘তিয়ানগং’ বা নামের চীনা মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান ও কাজ করেছেন।

শেনঝৌ-২০ দলের সদস্যরা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। গত এক বছরে এই কর্মসূচির মাধ্যমে চীন মহাকাশ গবেষণায় বেশ কয়েকটি নতুন মাইলফলক অর্জন করেছে।

এর মধ্যে রয়েছে নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেওয়া নভোচারীদের মহাকাশে পাঠানো, বিশ্বের দীর্ঘতম সময়ের মহাকাশে হাঁটা (স্পেসওয়াক) রেকর্ড। আগামী বছর পাকিস্তানের একজন নভোচারীকে তিয়ানগং স্টেশনে পাঠানোর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।

ইঁদুরগুলো ছাড়াও শেনঝো-২১ মিশনে ৬৩ কিলোগ্রাম পরীক্ষামূলক সরঞ্জাম এবং নমুনাও রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জীবন বিজ্ঞান, তরল পদার্থবিদ্যা এবং লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি গবেষণার জন্য উপকরণ।

এই গবেষণাগুলোর লক্ষ্য হল মহাকাশে ব্যাটারির নির্ভরযোগ্যতা উন্নত করা এবং মাইক্রোগ্রাভিটিতে জৈবিক ও ভৌত প্রক্রিয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।