কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসের পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাওভিনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। গত বছর মিনিয়াপোলিসের রাস্তায় নির্মমভাবে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যা করে চাওভিন। ওই সময় ‘আই ক্যান্ট ব্রিথ’ বলে আর্তচিৎকার করতে থাকেন ফ্লয়েড। কিন্তু নিষ্ঠুরতার চরম শিখরে পৌঁছে যায় চাওভিন ও তার সহযোগীরা। তাদের অত্যাচারে সেখানেই মারা যান ফ্লয়েড। এর প্রতিবাদে পুরো যুক্তরাষ্ট্র বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি লিখেছে, এক ভিডিওতে দেখা যায়, গত বছর মে মাসে ফ্লয়েডকে গ্রেফতারের সময় তার গলার উপর ৯ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন ৪৫ বছর বয়সী পুলিশ অফিসার ডেরেক চাওভিন।
বিবিসি লিখেছে, এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
এ ঘটনায় চাওভিনকে তিনটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়: সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডার, থার্ড ডিগ্রি মার্ডার এবং নরহত্যা। শাস্তি ঘোষণা না করা পর্যন্ত তিনি পুলিশি হেফাজতে থাকবেন।
সাজা হিসেবে কয়েক দশক জেল হতে পারে তার। এই রায়ে পৌঁছাতে ১২ সদস্যের বিচারকের প্যানেল পুরো একদিন সময় নেন। এর আগে তিন সপ্তাহ ধরে বিচার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। রায় ঘোষণার পর উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আদালতের বাইরে জড়ো হওয়া কয়েক শত মানুষ রায়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
ফ্লয়েড পরিবারের আইনজীবী বেন ক্রাম্প বলেন, এই রায় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মতো একটি ঘটনা। এক টুইটে তিনি বলেন, কষ্ট দিয়ে অর্জিত ন্যায়বিচার অবশেষে হাতে এলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও যে জবাবদিহিতা থাকা দরকার সেটিই এই রায়ের মাধ্যমে পাওয়া গেলো। রায় ঘোষণার পর পরই ফ্লয়েড পরিবারকে টেলিফোন করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস। প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বলতে শোনা যায়, অবশেষে ন্যায়বিচার হলো। আমাদের আরো অনেক কিছু করতে হবে। পদ্ধতিগত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এটি ছিল প্রথম পদক্ষেপ। টেলিভিশনে দেয়া জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বাইডেন বলেন, পদ্ধতিগত বর্ণবাদ পুরো জাতীয় আত্মার উপর একটি কলঙ্ক।
এরইমধ্যে মিস হ্যারিস আইনপ্রণেতাদের জর্জ ফ্লয়েড নামে একটি বিল পাসের নির্দেশ দিয়েছেন যা যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশিং ব্যবস্থায় সংস্কার আনবে। তিনি বলেন, এই বিল জর্জ ফ্লয়েডের লিগ্যাসির অংশ। এটি দীর্ঘদিন ধরে সম্পন্ন হওয়ার অপেক্ষায় ছিল।
বিবিসি আরো লিখেছে, মিনিয়াপোলিসের পুলিশ ফেডারেশন নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যারা পুলিশের প্রতিনিধিত্ব করে তারা জুরিদের তাদের ‘নিবেদিত কাজ সম্পন্ন করায়’ এবং ‘বিশাল একটি বোঝা’ বহনে সহায়তা করার জন্য ধন্যবাদ জানায়। ফেডারেশন বলে, আমরা ওই ক্ষডুগ্রস্ত সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে আমাদের দুঃখিত হওয়ার বিষয়টি জানাতে চাই, যা আমরা প্রতিনিয়ত অনুভব করেছি। এই মামলায় কেউই আসলে বিজয়ী নয়, সেই সাথে জুরিদের সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে।
মার্কিন মিডিয়াগুলো বলছে, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন চাওভিন। বিবিসির হোয়াইট হাউস বিষয়ক প্রতিবেদক তারা ম্যাককেলভি তার বিশ্লেষণে বলেন, রায় ঘোষণার দিন মানুষ চিৎকার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল এবং গোলাপি রঙের জামা পরা ছোট একটি মেয়েশিশু খুশিতে ছোট মুঠি শক্ত করে ধরেছিল।
২১ বছর বয়সী কেনেথ নয়াচি বলেন, মিনিয়াপোলিসে আজ একটি শুভ দিন। এটা একটা আশীর্বাদ। অধিকারকর্মীরা বলছেন, ন্যায়বিচার সাধিত হয়েছে এবং তাদের কাঁধ থেকে একটি বোঝা নেমে গেছে।
তাদের এই তুষ্টি শহরের আরো অনেকেই ভাগ করে নেন যেখানে মানুষ গত কয়েক মাস ধরে এটি বয়ে বেড়াচ্ছিল। কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগের ক্ষেত্রে এই মামলা উল্লেখযোগ্য এবং এই রায় অতীতের প্রথাকে ভেঙ্গে ফেলায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এর আগে খুব কম সংখ্যক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নরহত্যার অভিযোগ এসেছে এবং এদের মধ্যে আরো কম সংখ্যককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এই রায় ঘোষণার সাথে সাথেই জর্জ ফ্লয়েডের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা শেষ হয়ে যায় না।