একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা যাকে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বেঁচে থাকার জন্য মাত্র কয়েক মাস সময় দেওয়া হয়েছিল সেই তিনিই আজ স্তন ক্যান্সারকে হারিয়ে এক কঠিন যুদ্ধ জয় করেছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন যে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পরে ওই মহিলার দেহে স্তন ক্যান্সারের কোনও লক্ষণ আর দেখা যাচ্ছে না। এই পরীক্ষাকে যুগান্তকারী বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। ম্যানচেস্টারের ফলোফিল্ড -এর বাসিন্দা বছর একান্নর জেসমিন ডেভিড সফল জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা (NHS) ট্রায়ালের পরে এখন সেপ্টেম্বরে তার ২৫ তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপনের জন্য উন্মুখ। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার রিসার্চ ডেভিডের স্তন ক্যান্সার সারাতে দুই বছরের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এটিজোলিজুমাবের সাথে একটি পরীক্ষামূলক ওষুধ প্রয়োগ করেছিল। এটি একটি ইমিউনোথেরাপি ড্রাগ যা শিরায় দেওয়া হয়, প্রতি তিন সপ্তাহ অন্তর এই ড্রাগ জেসমিনকে দেয়া হতো। জেসমিন জানান, ‘আমার প্রাথমিক ক্যান্সারের চিকিৎসার পরে আমি ১৫ মাস ভালোই ছিলাম কিন্তু তারপরে ক্যান্সার আবার আমার দেহে ফিরে আসে। যখন আমাকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আমি জানতাম না এটি আমার ওপর কাজ করবে কিনা, তবে আমি ভেবেছিলাম যে অন্তত আমি অন্যদের সাহায্য করার জন্য কিছু করতে পারি এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমার শরীর দান করতে পারি। প্রথমে, আমার মাথাব্যথা এবং শরীরে বেশ তাপমাত্রা সহ অনেক ভয়ঙ্কর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল, তাই আমি ক্রিসমাসের সময় হাসপাতালে ছিলাম এবং শরীর বেশ খারাপ ছিল। তারপর সৌভাগ্যক্রমে আমি চিকিৎসার পর ভাল সাড়া দিতে শুরু করেছি।”দুই প্রাপ্তবয়স্ক শিশুর মা এখন একটি কেয়ার হোমে ক্লিনিকাল লিড হিসাবে কাজ করছেন।
জেসমিন ২০১৭ সালের নভেম্বরে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, সেই সময়ে তিনি স্তনের উপরে একটি পিণ্ড দেখতে পান। তিনি ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ছয় মাসের কেমোথেরাপি এবং একটি মাস্টেক্টমি করিয়েছিলেন, তারপরে রেডিওথেরাপির ১৫ টি সাইকেল শেষ করার পর তার শরীর থেকে ক্যান্সার নির্মূল হয়। তারপর ২০১৯ সালের অক্টোবরে আবার জেসমিনের শরীরে ক্যান্সার ফিরে আসে, এবং স্ক্যান করে দেখা যায় তার সারা শরীরে একাধিক ক্ষত। ক্যান্সার ফুসফুস, লিম্ফ নোড, বুকের হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং তাকে বলা হয়েছিল যে বেঁচে থাকার জন্য তাঁর হাতে এক বছরেরও কম সময় আছে। এর দুই মাস পরে, এবং অন্য কোন বিকল্প ছাড়াই, জেসমিনকে প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অংশগ্রহণের মাধ্যমে গবেষণার অংশ হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এখন তিনি সম্পূর্ণ ক্যান্সারমুক্ত, তবে ২০২৩ পর্যন্ত তাঁকে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার পর জেসমিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তিনি বাকি জীবনটা ঈশ্বর ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি কৃতজ্ঞতায় অতিবাহিত করবেন। খ্রিস্ট ধর্মের প্রতি অগাধ বিশ্বাস তাঁকে এই কঠিন যাত্রায় অনেক সাহায্য করেছে বলে জানিয়েছেন এই প্রৌঢ়া। আপাতত অতীত ভুলে আগামী সেপ্টেম্বরে নিজের ২৫ তম বিবাহ বার্ষিকীর প্রস্তুতিতে মন দিতে চান জেসমিন ডেভিড।
সূত্র : দা প্রিন্ট