ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে সাবওয়ে (পাতাল রেল) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ লক্ষ্যে বুধবার (২৪ মার্চ) মহানগরীর একটি হোটেলে সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা র্শীষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের মান্যবর রাষ্ট্রদূত Mr. Francisco de Asís Benítez Salas উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, সাবওয়ে নির্মিত হলে ঢাকা শহরের প্রায় ৮০ লক্ষ কর্মজীবী মানুষের মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ মাটির নীচে স্থানান্তর হবে এবং মাটির উপরিভাগে যানজট ও জনজট মুক্ত থাকবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সকল কাজের উদ্দেশ্য জনকল্যাণ। জনস্বার্থে কাজ করতে হবে, কমাতে হবে জনভোগান্তি। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন একই ধরনের প্রকল্পগুলোর সাথে বাড়াতে হবে সমন্বয়। কাজের গুণগত মান সুরক্ষার পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে। তা না হলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায় এবং সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার উপর চাপ পড়ে। এছাড়া প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে এর প্রয়োজনীয়তা এবং কার্যকারিতার বিষয়টিকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রমত্তা পদ্মার বুকে নির্মিত হচ্ছে দেশের সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু। ইতোমধ্যে ৪১টি স্প্যানের সবকটি সফলভাবে স্থাপনশেষে দ্রুতগতিতে রেলওয়ে এবং সড়কপথের স্ল্যাব বসানোর কাজ এগিয়ে চলেছে। মূল সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি শতকরা প্রায় ৯২.৫০ ভাগ, নদীশাসন কাজের অগ্রগতি শতকরা ৮০ ভাগ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৮৪.৫০ ভাগ। আগামী বছরের জুন নাগাদ পদ্মা সেতু নির্মাণশেষে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে এসময় তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, চট্টগ্রামে ওয়ান সিটি টু টাউনের আদলে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি টিউবের রিং প্রতিস্থাপনসহ বোরিং কাজ শেষ হয়েছে এবং এরইমধ্যে টিউবটির ২০০ মিটার রোড স্ল্যাব নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় টিউবটির ৭০০ মিটার বোরিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত টানেলের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি শতকরা ৬৫ ভাগ।
উল্লেখ্য, ঢাকা শহরে সাবওয়ে নির্মাণের লক্ষ্যে স্পেনের টিপসা’র নেতৃত্বে যৌথভাবে জাপানের (PADECO), বিসিএল এসোসিয়েটস্, কেএসসি এবং বেটস-কে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্টান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ২৩৮ কিলোমিটার সাবওয়ে নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইসহ ৯০ কিলোমিটার সাবওয়ে নির্মাণে প্রাথমিক নকশা প্রণয়নের দায়িত্ব পায়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সার্ভে ও মডেল স্ট্যাডি করে ২৫৮ কিলোমিটার সাবওয়ে নির্মাণের ফুল নেটওয়ার্ক প্রস্তাবনা গত ১৫ মার্চ ২০২১ তারিখে দাখিল করে।
সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, স্থপতি ইকবাল হাবিব, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রতিনিধি, প্রকল্পের পরিচালক, সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য স্টেক-হোল্ডারগণ উপস্থিত ছিলেন।