প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রত্যেক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি গণহারে টিকাদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাপকভাবে ভ্যাকসিন দিতে হবে, যাতে দেশের সবাই সুরক্ষিত থাকে। এর জন্য যত টাকা লাগবে, যত ভ্যাকসিন দরকার হয়, কিনব এবং বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আমরা তৈরি করব, যাতে মানুষের কোনো অসুবিধা না হয়।’
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে ‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস’ উদযাপন এবং ‘জনপ্রশাসন পদক ২০২০ ও ২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরই মধ্যে প্রায় এক কোটি ৮৭ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছে। বাংলাদেশের বয়স্ক কোনো মানুষ টিকা প্রাপ্তি থেকে বাদ যাবে না। ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে সবার জন্যই আমরা এই টিকা ক্রয় করতে থাকব। সবাই যাতে টিকা পায় সে ব্যবস্থাও আমরা অবশ্যই করব। এরই মধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি, সম্মুখসারির যোদ্ধাদের পরিবারই শুধু নয়, তাদের বাড়িতে যারা কাজ করে তাদেরও যেন ভ্যাকসিন দিয়ে দেওয়া হয়। তাতে সবাই সুরক্ষিত থাকতে পারবে।’
প্রশাসন নিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে অল্প সময়ের মধ্যে যে উন্নয়ন এবং বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলো, এটা আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রত্যেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন বলেই হয়েছে। আমরা যে পরিকল্পনাগুলো নিয়েছি সেগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন এবং মানুষ তার সুফলটা পেয়েছে বলেই দেশের উন্নতি সম্ভব হয়েছে।’ তিনি এ জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার মানে জনগণের সেবক। সরকারি কর্মকর্তাদের যদি সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া যায়, কর্মপরিকল্পনা দেওয়া যায়, তারা যে অসাধ্য সাধন করতে পারে, সেটাই আজকে প্রমাণিত।’
সরকারপ্রধান এ সময় কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘ভালো কাজের যেমন পুরস্কার পাবেন, তেমনি কেউ যদি খারাপ কাজে সম্পৃক্ত হন, তাহলে তাঁদের ক্ষমা নেই। তাঁদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। এই শৃঙ্খলাটা থাকতে হবে। এই নিয়মটা থাকতে হবে এবং সেটাই আমরা করব।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি সরকারি কর্মচারীদের বলব, জনগণের সেবা করাই সবচেয়ে বড় কাজ। আপনারা অনেকেই চমত্কার উদ্ভাবনী কাজ করেছেন, যা দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজে লাগছে এবং আপনাদের কাজগুলোর সুফল আগামী প্রজন্ম ভোগ করবে। এভাবেই বাংলাদেশকে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি করোনা আক্রান্তদের সেবা করতে গিয়ে গত এক-দেড় বছরে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য এবং তাঁর দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আজকে ২০২১-এর মাঝে আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সেগুলো মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই এলো অদৃশ্য শত্রু করোনা। ইনশাআল্লাহ এর হাত থেকেও আমরা মুক্তি পাব।’
সরকারি কর্মচারীরা যাঁরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন, তাঁদের এলাকাভিত্তিক উন্নয়নে অবদান রাখারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একেকটা এলাকার উন্নয়ন কিভাবে করা যায়, সেটা আপনারা সবচেয়ে বেশি অনুধাবন করতে পারেন। মানুষকে কিভাবে সেবা দেওয়া যায়, কিভাবে উন্নত জীবন দেওয়া যায়, সেদিকেই বিশেষভাবে দৃষ্টি দিবেন। যাতে আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘এই মহামারি আজকে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রেই একটি সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এর থেকে যত দ্রুত বাংলাদেশকে মুক্ত করা যায়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। মানুষ যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো মেনে চলে, সে বিষয়ে তাদের সচেতন করতে হবে। মানুষকে একটু সচেতন করার কাজটা আপনারা নিশ্চয়ই করবেন।’
গত ২৩ জুলাই ছিল পাবলিক সার্ভিস দিবস, তবে করোনার কারণে এটির আয়োজন গতকাল করা হয়। আর এ দিনটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং তাঁর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন। তিনি এ দিনটির স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অনেক পূর্বকথাও ভাষণে তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে প্রশাসনের উন্নয়নের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহীত উদ্যোগের বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের লেখা দুটি স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। সূত্র : বাসস।