মোদি সরকার পড়ে যাবে, সাক্ষাৎকারে রাহুল গান্ধী

ভারতের মোদি সরকার খুব বেশি দিন টিকবে না বলে মত দিয়েছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, খুব শিগগিরই শরিক দলগুলোর সঙ্গে মোদি সরকারের বিরোধের সূত্রপাত হবে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব ভাবনার কথা জানিয়েছেন রাহুল।

সাক্ষাৎকারে কংগ্রেস নেতা দাবি করেছেন, চলতি মাসেই অপ্রত্যাশিত ফলাফলের পর ভারতের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল একটি টেকটোনিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকার টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করবে।

রাহুলের সাক্ষাৎকার নিয়ে মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। এতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহেই শপথ নিয়েছেন মোদি। জওহরলাল নেহরুর পর ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হয়েছেন তিনি। কিন্তু ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ এই সরকার এক দশকের মধ্যে এবার সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় আছে। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর এবারই প্রথম নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে বিজেপি। ক্ষমতা বজায় রাখতে দলটি তাই মিত্র দলগুলোর ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে।

অন্যদিকে নির্বাচনের ফলাফলে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট পূর্বাভাসের চেয়েও অনেক ভালো সাফল্য পেয়েছে। ভারতের লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৩৪টি আসনে এবার জয় পেয়েছে এই জোট। আর বিপুল জয়ের পূর্বাভাস নিয়ে শেষ পর্যন্ত টেনেটুনে মেট্রিক পাশের মতো ২৯৩ আসনে জয় পেয়ে ক্ষমতায় আছে মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট। নির্বাচনের এই ফলাফল বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীকে অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনের পর ভারতের নতুন পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রাহুলের নাম ঘোষণা করবে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট।

নির্বাচনী ফলের পরিসংখ্যান টেনে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে রাহুল বলেন, ‘সংখ্যাগুলো এমন যে, এগুলো খুব ভঙ্গুর এবং সামান্য ঝামেলা হলেও সরকারের পতন ঘটে যাবে। মূলত একটি শরিক দল বেঁকে বসলেই হবে।’

রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, মোদির শিবিরে আগে থেকেই বড় অসন্তোষ ছিল। শুধু তাই নয়, এসব ঝামেলার সূত্র ধরে আগে থেকেই মোদির পক্ষের কিছু নেতা বিরোধী জোটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছে। যদিও এই বিষয়ে এর বেশি কিছু জানাতে অনীহা প্রকাশ করেন কংগ্রেস নেতা।

নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি ধর্মীয় উত্তেজনাকে পুঁজি করার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এলে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের চাকরি এবং সংরক্ষিত কোটা কেড়ে নেবে।

এই বিষয়টি নিয়ে নয়াদিল্লিতে নিজ বাসভবনের ব্যক্তিগত দপ্তর থেকে রাহুল বলেন, ‘এটি এমন একটি আইডিয়া যা দ্বারা আপনি ঘৃণা ছড়াতে পারেন, আপনি ক্ষোভ ছড়াতে পারেন এবং আপনি এর সুফলও পেতে পারেন। তবে ভারতের মানুষ নির্বাচনে এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’

এসব কারণেই মোদির জোট সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করবে বলে জানান রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, ‘কারণ ২০১৪ ও ১৯ সালে শ্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য যা কাজ করেছিল, তা এখন আর কাজ করছে না।’

রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, দেশে স্বাভাবিক ও ন্যায্য পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন হলে তাঁদের বিরোধী জোট সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেত। ভোটের আগে গান্ধী এবং তার সহযোগীরা মোদির সরকারকে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর ক্র্যাকডাউনের জন্য অভিযুক্ত করেছিল। এর মধ্যে দুজন মুখ্যমন্ত্রীকে কারাগারেও যেতে হয়েছে। এমনকি কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়েছে। সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে রাহুল বলেন, ‘আমরা পিঠে হাত বেঁধে যুদ্ধ করেছি এবং ভারতীয় সাধারণ মানুষ ও দরিদ্র মানুষেরা জানত—তাদের কী করতে হবে।’

Comments (0)
Add Comment