মেডিক্যালে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারকারী দুই মেধাবীর গল্প
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় সারা দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছেন তানজিম মুনতাকা সর্বা এবং দ্বিতীয় হয়েছেন তাজওয়ার হাসনাত ত্বোহা। এ দুই শীর্ষ মেধাবী জানিয়েছেন তাদের স্বপ্ন ও সফলতার গল্প।
তানজিম মুনতাকা সর্বার জন্ম কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে। বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। বাবা আবদুর রহমান পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং মা জিনিয়া শারমিন একজন গৃহিণী। বর্তমানে থাকেন রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং রাজধানীর হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। এবারের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় সর্বমোট ৯২.৫ নম্বর পেয়েছেন তিনি। ঢাকা মেডিক্যালে পড়ে কার্ডিওলজিস্ট হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তার।
সর্বা জানান, বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা তাকে মেডিক্যালে ভালো ফলাফল করতে সাহায্য করেছে। মেডিক্যাল প্রস্তুতি নিতে বারবার ভেঙে পড়লেও মা-বাবা পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।
ভালো ফলাফলের জন্য সর্বা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শিক্ষকদের। ভিকারুননিসা স্কুলের অনুপ্রেরণা এবং হলিক্রস কলেজের কঠোর নিয়ম কানুন ও অধ্যাবসায় তাকে ভালো প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করেছে।
শিক্ষকদের কাছেই সর্বা সবসময় ডাক্তার হওয়ার অনুপ্রেরণা পেতেন। শিক্ষকরাই জানিয়েছিলেন ডাক্তার হলে মানুষের সেবা করা যায়। সর্বার আত্মীয়দের মধ্যে কেউ ডাক্তার নেই। সেই বিষয়টিও সর্বার মনে সবসময়ই ছিল। আত্নীয়দের মধ্যে প্রথম ডাক্তার হতে চলেছেন সর্বা।
ডাক্তার হতে চাওয়া তরুণদের পরামর্শ দিয়ে সর্বা বলেন, প্রথমে এইচএসসির সিলেবাসটা ভালো করে শেষ করতে হবে এবং ধৈর্য নিয়ে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। এইচএসসির সিলেবাস কম্পিলিট হলে প্রস্তুতি নিতে অনেকটা সহজ হবে। সঠিক পরামর্শ এবং গাইডলাইন পেলে ভালো ফলাফল করা সম্ভব।
মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন তাজওয়ার হাসনাত ত্বোহা। তিনি শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামি একাডেমি অ্যান্ড হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন। এখন পড়তে চান ঢাকা মেডিক্যালে।
ত্বোহা বেড়ে উঠছেন হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জে। পিতা তোয়াফেল আহমেদ এবং মাতা শানসুন নাহার বেগম দুজনেই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে ছিল তার। সে লক্ষ্যেই চালিয়ে গিয়েছেন পড়ালেখা। ঢাকা মেডিক্যালে পড়ে নিউরোলজিস্ট হতে চান তিনি।
অনুপ্রেরণার গল্প বলতে গিয়ে ত্বোহা বলেন, ২০১৯ সালে একবার আমি একটি অ্যাডমিশন অরিয়েন্টেড প্রতিযোগিতায় (নবম শ্রেণির সিলেবাস) উপজেলা থেকে প্রথম হই। সেদিন আমার স্কুলের কেমিস্ট্রি শিক্ষিকা মাহফুজা ম্যাডাম বলেছিলেন, আমাদের ত্বোহা ইনশাআল্লাহ ডিএমসিতে যাবে। সেবারই আমার শোনা প্রথমবার ডিএমসি। সেখান থেকে স্বপ্নের বীজ বপণ। কিন্তু প্রান্তিক এলাকায় খুব বেশি কম্পিটিশন না থাকায় আমি এই কম্পিটিশনের ডেপথ বুঝতে পারিনি।
তিনি বলেন, ২০২২ সালে যখন নটরডেম কলেজে পা দিই, প্রথমদিন ক্লাস করে এসে দ্বিতীয় দিন যাওয়ার সময় আব্বুকে বলি, এই কলেজে ৫০০তমও অনেক ভালো অবস্থান। সময়ের সঙ্গে আমার ডেডিগেশন বাড়ে। বেড়ে যায় আমার পড়ালেখার আগ্রহ। কলেজের প্রথম পরীক্ষায় আমি একশোর মধ্যে আসি। আমার চেষ্টা আরও বেড়ে যায়। আমার কলেজের আঞ্জুম ভাই বেরিয়ে আসেন, ব্যাপক আলোচনা তৈরি হলে তখন জানতে পারি, ভর্তি পরীক্ষায় টপার হতে পারলে সবাই এক নামে চিনবে। আমি আরও পড়াশুনা বাড়িয়ে যখন ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষায় বসি, তখন আমার এভারেজ ৯০ এর কাছাকাছি চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, ফিজিক্স কেমিস্ট্রিতে আমার ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং এ ঝুঁকে পড়ি। সবাই জানতো আমি মেডিক্যাল ড্রিমার। কিন্তু আমি ভিতরে ভিতরে সলিড ইঞ্জিনিয়ারিং এ শিফট হই। সবসময় ফিজিক্সই করতাম। ইয়ার ফাইনাল ফিজিক্স পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক মিনিট পর দুর্ভাগ্যবশত আমার ক্যালকুলেটর নষ্ট হয়ে যায় এবং আমি বিধ্বস্ত হই। যখন পেপার দেওয়া হয়, সুজিত স্যার বলেন, ‘যদি তোমাদের কখনো মনে হয়, কোনো উদ্দেশ্যের জন্য তুমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছ, তারপরও সেটার কোনো রিওয়ার্ড পাওনি। তবে এমন একদিন আসবে যেদিন তোমার ওই ব্যর্থ পরিশ্রম বহুগুণ বেড়ে রিওয়ার্ড নিয়ে আসবে এবং সবাইকে জানিয়ে দিবে ওই না পাওয়াটুকু।’ বিষয়টা আমার সঙ্গে দারুণভাবে রিলেটেবল হয়। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং ঘুম থেকে উঠার পর সুজিত স্যারের এই কথাগুলো মনে মনে বলতাম। সেদিনের ওই ক্লাসের পর গত দেড় বছরে আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন বোধ হয়নি।
ত্বোহার বাবা মা দুজনেই নিউরো পেশেন্ট। তাই বাবা মায়ের জন্য নিউরোসায়েন্স নিয়ে পড়তে চান এই টপার।
নতুনদের জন্য টপার বলেন, ভালোভাবে পড়লে ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব। নিজেকে যাচাই করতে অনেক এক্সাম দিয়েছি, সেসব কাজে দিয়েছে। কঠোর অধ্যাবসায় নিয়ে এগিয়ে গেলে ভালো ফলাফল করা সম্ভব।