প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাবা মো:আবুল হাশেম মনে-প্রাণে চাইতেন তার একমাত্র মেয়ে শরিফা আক্তার নীপা একজন চিকিৎসক হবেন। সাধারণ মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকবে তার মেয়ে। চিকিৎসক মেয়ের বাবা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিবেন।
সম্ভবত এমন স্বপ্ন দেখেই দিন দিন-রাত পার করতেন শিক্ষক আবুল হাশেম। আর মেয়ে তার বাবা-মার স্বপ্ন পূরণের আশায় চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যান।
আবুল হাশেম ও রেহেনা দম্পত্তির দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে বড় শরিফা আক্তার নীপা। ২০১১ সালে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেন। উর্ত্তীণ হননি। তবে হাল ছাড়েন নি নিপা। পরের বছর অর্থ্যাৎ ২০১২ সালে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা বাদ দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সে জন্য বাবা আবুল হাশেম মনে কষ্ট পান।
তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাউন্টিং বিভাগে তার ব্যাচে সবচেয়ে ভালো ফলাফল করেন নিপা। স্বীকৃতিস্বরুপ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরীফা আক্তার নীপার হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন। তার মাঝেই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। এখন সেই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একাউন্টিং এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের প্রভাষক কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নিমসারের মেয়ে শরীফা আক্তার নীপা।
কথা হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক শরীফা আক্তার নীপার সাথে। তিনি জানান, ২০১১ সালে যখন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হতে পারিনি তখন খুব হতাশায় ছিলাম। ওই সময়টা আমার জন্য সবচেয়ে কষ্টের ছিলো।
বাবা-মা বন্ধুরা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে আমি কৃতজ্ঞতা জানাবো সোনার বাংলা কলেজের আইসিটি বিষয়ে শিক্ষক মিজানুর রহমান স্যারের প্রতি। ওই সময়টায় স্যারের উৎসাহ অনুপ্রেরণার পাশাপাশি স্যারের দেখানো পথে এগিয়েছি বলেই হয়তো আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি।
নীপা জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে আমি একদিনও ক্লাশ বন্ধ করিনি। আমার বাড়ী বুড়িচংয়ের নিমসারে। ছাত্রীনিবাস বা হলে না থেকে প্রতিদিন নিমসার থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ক্লাশ করে আবার বাড়ী ফিরে যাওয়া একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে কম কষ্টের ছিলো না। তবুও মনে স্বপ্ন আর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে পথ চলেছি। একদিনও ক্লাশ বন্ধ করিনি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টারে দেখলেই বুঝতে পারবেন। নিয়মিত ক্লাশ করেছি। বন্ধুদের সাথে আড্ডাও দিয়েছি। ফলাফল ভালো হয়েছে। আমি আমার ব্যাচের সবচেয়ে বেশী নম্বর পেয়ে উর্ত্তীণ হয়েছি। আমার সিজিপিএ সর্বমোট ৪ থেকে ৩.৮৮।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে স্বর্ণ পদক পাওয়ার অনুভুতি সর্ম্পকে জানতে চাইলে শরিফা আক্তার নীপা জানান, এমন অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এমন অনুভুতি শুধু অনুভব করার বিষয়। আমার পরিশ্রম স্বার্থক হয়েছে। ডাক্তার না হতে পারলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছি। এখন আমার বাবা-মা ও ছোট দুই ভাই ভীষণ খুশি। আনন্দিত।