মেট্রোরেল পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সহকর্মীদের মারধরের অভিযোগে সোমবার (১৭ মার্চ ) সকালে কর্মবিরতি করেছেন মেট্রোরেলের একদল কর্মী। তবে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চলাচল করেছে। অন্তত দুটি স্টেশনে মেট্রোরেলের কোনো কর্মীকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। অবশ্য এসময়ে যাত্রীদের বিনামূল্যে ভ্রমণের সুযোগ করে দিতে দেখা গেছে।
মিরপুর ১০ এবং সচিবালয় স্টেশনে কয়েকজন আনসার সদস্য ছাড়া কোনো কর্মীকে দেখা যায়নি।
একজন যাত্রী জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মিরপুর ১০ স্টেশনে গেট খোলা ছিল এবং যাত্রীরা তাদের কার্ড ছাড়াই সেগুলো ব্যবহার করছিলেন।
পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে প্রায় আড়াই ঘন্টা পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে মেট্ররেল কর্মীরা। ইতোমধ্যে মেট্রোরেলের টিকেট ব্যবস্থাও চালু হয়েছে।
এর আগে, এমআরটি পুলিশের দ্বারা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল) এর চার কর্মী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় মেট্রোরেল কর্মীরা কর্মবিরতির ঘোষণা দিলেও মেট্রোরেল চলাচল অব্যাহত থাকে।
মেট্রো রেলের একজন কর্মী জানান, পাস ব্যবহার না করায় কয়েকজন এমআরটি পুলিশ সদস্য তাদের কয়েকজন সহকর্মীকে বাধা দিলে তারা কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন। তবে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার পর আমরা আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
স্টেশনে কর্মীদের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মীরা কিছু স্টেশনে পৌঁছেছেন এবং শিগগির অন্য স্টেশনে পৌঁছাবেন।
বেসরকারি চাকরিজীবী অপু আহমেদ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বলেন, ‘মতিঝিল স্টেশনে দেখলাম কার্ড পাঞ্চ নিচ্ছে না,মানে টিকিট লাগছে না। দায়িত্বরত কর্মীরা বলছেন,সমস্যা নেই,যান। লোকজন যাচ্ছে। আবার কাঙ্খিত স্টেশনে নেমেও যাচ্ছে।’ মতিঝিল স্টেশন থেকে কারওয়ান বাজার স্টেশনে আসার পথে তিনি এমন দৃশ্য দেখেন।
তবে সকাল ১০টার দিকে উত্তরা স্টেশন থেকে বেসরকারি চাকরিজীবী মো. রফিউদ্দিন কারওয়ান বাজার স্টেশনে এসেছেন। তিনি বলেন, তিনি স্বাভাবিকভাবেই দুই স্টেশনে কার্ড পাঞ্চ করতে পেরেছেন। তার ভাড়াও কেটেছে।
রবিবার (১৬ মার্চ ) রাতে ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ‘সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ’ ব্যানারে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনা তুলে ধরে ছয়টি দাবি জানানো হয়।
মেট্রোরেল কর্মীদের দাবিগুলো হচ্ছে, আগামী এক কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার মূল হোতা ওই পুলিশ সদস্যকে (এসআই মাসুদ) স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে ও ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে (কনস্টেবল রেজনুল, ইন্সপেক্টর রঞ্জিত) শাস্তি দিতে হবে এবং তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। মেট্রোরেল, মেট্রো স্টাফ ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে হবে, এমআরটি পুলিশকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, স্টেশনে দায়িত্বরত সিআরএ টিএমও, স্টেশন কন্ট্রোলারসহ অন্য সব কর্মীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, অফিশিয়াল পরিচয়পত্র ও অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি যেন স্টেশনের পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং আহত কর্মীর সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে বলা হয়, দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মেট্রোরেলের সব কর্মী কর্মবিরতি পালন করব এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং মেট্রো স্টেশনে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়, ‘আনুমানিক বিকেল সোয়া ৫টায় দুজন নারী কোনো পরিচয়পত্র না দেখিয়ে সিভিল ড্রেসে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে এসে ইএফও অফিসের পাশে থাকা সুইং গেট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। যেহেতু তারা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিহিত ছিলেন না ও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি, তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআরএ নিয়ম অনুযায়ী তাদের সেখান থেকে পিজি গেট ব্যতীত সুইং গেট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান। তবে, সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা এতে উত্তেজিত হয়ে তর্কে লিপ্ত হন এবং একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান।’
‘পরবর্তীতে ঠিক একইভাবে দুজন এপিবিএন সদস্য সুইং গেট ব্যবহার করে সুইং গেট না লাগিয়ে চলে যান, উক্ত বিষয়ের কারণ তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা পূর্বের ঘটনার জের ধরে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে দায়িত্বে থাকা সিআরএ এর সঙ্গে ইএফও’তে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ইএফও থেকে বের হওয়ার সময় কর্মরত সিআরএ এর কাঁধে বন্দুক দিয়ে আঘাত করে এবং কর্মরত আরেকজন টিএমও এর শার্টের কলার ধরে জোরপূর্বক এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করে। উপস্থিত স্টেশন স্টাফ ও যাত্রীগণ বিষয়টি অনুধাবন করে উক্ত এমআরটি পুলিশ এর হাত থেকে কর্মরত টিএমওকে পুলিশের কাছ থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে।’
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ জানান, ৯৫ শতাংশ কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে গেছে, বাকিটাও দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্তের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।