মুসলিম শিশুর জন্য প্রথম যে শিক্ষা ফরজ

একজন মুসলিম শিশুর প্রথম শিক্ষা হওয়া উচিত আল্লাহর একত্ববাদের পরিচয়। জন্মের পরপরই শিশুর ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেওয়ার মাধ্যমে এ শিক্ষা শুরু করতে হয়। উবাইদুল্লাহ ইবনে আবু রাফি (রা.) বলেন, ‘ফাতেমা (রা.) যখন আলি (রা.)-এর ছেলে হাসান (রা.)-কে প্রসব করলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার কানে নামাজের আজানের ন্যায় আজান দিয়েছিলেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫১০৫)

সন্তানকে দ্বীনের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি শেখানো মা-বাবার ওপর ফরজ। দ্বীন না শেখানো সন্তানের ওপর সবচেয়ে বড় জুলুম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপর (প্রয়োজনীয় ধর্মীয়) জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৪)

অনেক অভিভাবক শিশুকে দুনিয়াবি বিষয়াদি যতটা গুরুত্বের সঙ্গে শিক্ষা দেন, দ্বীনি শিক্ষার ক্ষেত্রে ততটুকু গুরুত্ব দেন না। শিশুকে জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করালেও আগে দ্বীনের শিক্ষা দেওয়া উচিত। শিশু চারাগাছের মতোই। একটা চারা যেনতেনভাবেই রোপণ করে যেমন ভালো গাছের আশা করা যায় না, ঠিক তেমনি সন্তানদের দ্বীনের শিক্ষা না দিয়ে বড় হলে দ্বীনদার হয়ে যাবে এমন আশা করা যায় না। দ্বীনদার হওয়ার জন্য ছোট থেকেই তাদের দ্বীনের শিক্ষা দিয়ে বড় করতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি নবজাতক তার স্বভাবজাত দ্বীন ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার মা-বাবা তাকে ইহুদি, খ্রিষ্টান অথবা অগ্নিপূজক হিসেবে গড়ে তোলে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৩৫৮)

দ্বীনকে আমরা প্রায়শই ধর্মকর্মের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলি। আমাদের বুঝতে হবে ধর্ম বলতে যা বোঝায়, দ্বীন বলতে তা বোঝায় না। দ্বীন হচ্ছে ব্যাপক একটা শব্দ, যার মধ্যে ধর্ম আছে। আমরা শিশুদের দ্বীন শিক্ষা দেব। আমরা অবশ্যই সন্তানদের কালিমা, নামাজ, কোরআন শেখাব। এর পাশাপাশি তারা আল্লাহকে চিনবে, আল্লাহর রাসুলকে জানবে, সাহাবিদের জানবে। তারা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আল্লাহ প্রদত্ত আদেশ-নিষেধ জানবে। এভাবেই তাদের দ্বীনের ছাঁচে গড়ে তোলা হবে। এটাই হচ্ছে দ্বীন শিক্ষা। ‎সন্তান-সন্ততি আল্লাহতায়ালার দেওয়া অমূল্য সম্পদ। তাদের মাধ্যমেই মা-বাবাকে পরীক্ষা করবেন আল্লাহ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর জেনে রাখ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি অকল্যাণের সম্মুখীনকারী (মহা পরীক্ষা)। বস্তুত আল্লাহর কাছে রয়েছে মহাসওয়াব।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ২৮)

‎সুসন্তান যেমন মা-বাবার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের বড় সম্পদ এবং সদকা জারিয়া, তেমনি সন্তান যদি দ্বীনি শিক্ষা না পায়, মা-বাবাকে তার গুনাহের ফল ভোগ করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জেনে রেখ, তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাদের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৮৯৩)

‎বর্তমানে বেশির ভাগ মা-বাবা দুনিয়ার বিষয়গুলো যেভাবে শিক্ষা দেয়, ইসলামের বিধিবিধানকে ওইভাবে শিক্ষা দেয় না। ‎‎সন্তান হলো মা-বাবার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। এই আমানতের যথাযথ হক আদায়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের নামাজ আদায় করতে আদেশ করবে; যখন তারা সাত বছর বয়সে পৌঁছবে। আর নামাজের জন্য তাদের শাসন করবে; যখন তারা ১০ বছর বয়সে পৌঁছবে। আর তখন তাদের জন্য আলাদা বিছানা বা শয্যার ব্যবস্থা করবে।’ (আবু দাউদ)। কোরআন শিক্ষাকারী ব্যক্তিকে আল্লাহর রাসুল (সা.) সর্বোত্তম ব্যক্তি বলেছেন। ওসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৬৬১)

উত্তম হওয়ার যে মাপকাঠি তথা কোরআনের জ্ঞান শিক্ষা করা, তা না করে তো কেউই উত্তম হতে পারবে না। কোরআনের জ্ঞান না শিখে পৃথিবীর সব জ্ঞান-বিজ্ঞান শিখে নিলেও সেই ব্যক্তিকে সর্বোত্তম বলা যাবে না। তাই সবার আগে সন্তানকে কোরআনের জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া জরুরি। ‎শিশু বয়সেই অল্প অল্প করে আল্লাহর পরিচয় শেখানো, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নাম শেখানো, গল্পে গল্পে তার পরিচয় ও আখলাক তুলে ধরা মা-বাবার কর্তব্য। পাশাপাশি তাকে শেখাতে হবে ইসলামের বিধি-বিধান, আদেশ-নিষেধ ও প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল।

Comments (0)
Add Comment