মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করতে চায় সিএনএন

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংবাদ মাধ‌্যম ক্যাবল নিউজ নেটওয়ার্ক (সিএনএন) মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

এর অংশ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিএনএনের সঙ্গে অংশীদারত্ব চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেলেই সিএনএনের সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে প্রস্তাবিত কাজটি তত্ত্বাবধান ও বাস্তবায়ন করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই)। এজন্য সিএনএনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হবে। এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংশ্লিষ্ট খাতের শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করা হবে।

বাংলাদেশের সক্ষমতার চিত্র বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য সিএনএন কর্তৃপক্ষ গত ২২ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। সিএনএন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ (মুজিববর্ষ) এবং স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি বা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে বিবেচনায় নিয়ে এ প্রস্তাব দেয়।

সূত্র জানায়, ২০২১ সাল আমাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ পালন করা হচ্ছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও উন্নয়নের চিত্র প্রচার করা প্রয়োজন।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবির পঞ্চম দফায় বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য কাঠামো নীতির কথা তুলে ধরেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধনের মাধ্যমে জাতির পিতা স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের কারিগর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের গতিশীল নেতৃত্বে কয়েক বছরে বিশ্ব দরবারে অর্থনৈতিকভাবে, বিশেষ করে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি লাভ করেছে বাংলাদেশ। যা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসছে। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ইতোমধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ পরিচিতি লাভ করেছে। এছাড়া, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) অর্জন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, করোনা মহামারির ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনীতি ও সামগ্রিক বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে এই মহামারি মোকাবিলা করা হচ্ছে। ২০২৬ সালের পর এলডিসি থেকে উন্নতি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রত্যাহার হলে বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমতে পারে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে বাংলাদেশের কৃষি খাতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি অর্থনীতিতে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেছেন। এসব বাধা সফলতার সঙ্গে মোকাবিলার জন্য বাণিজ্য প্রসারে সরকারের চলমান গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড, মানসম্মত পণ্য ও সেবা, দক্ষ জনশক্তি এবং বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়টি বিশ্বদরবারে সঠিকভাবে প্রচার করা জরুরি। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্রমবর্ধমান শিল্প-বাণিজ্য খাতের বিকাশ, বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা, সরকারের সাফল্য প্রচার ও প্রসারের জন্য মার্চ মাসে সিএনএনে প্রোমো অডিও-ভিজুয়াল সম্প্রচারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শিল্প-বাণিজ্য খাতের এবং সংশ্লিষ্ট শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্জনগুলো বিশ্বব্যাপী সিএনএনের দর্শক-শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটবে, বিনিয়োগ বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের সামষ্টিক অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

Comments (0)
Add Comment