আমাদের বড় মামা মো: সাইফুল্লাহ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে উচ্চ শিক্ষার্থে বিলেত যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ! দেশের ক্রান্তিলগ্নে দেশ ত্যাগ না করে লক্ষ তরুণের সাথে তিনিও এই মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেন। বিজয় যখন আমাদের দ্বার প্রান্তে, সেই সময় তিনি রাজাকার বাহিনীর সহায়তায় পাক সেনাদের হাতে বন্ধী হন! আরোও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে তাঁকে হাত ও চোখ বেঁধে বাড়ীর সামনে লাইনে দাঁড় করে গুলি করে হত্যা করা হয়! মামার দাদী তাঁর প্রিয় নাতিকে রক্ষা করতে ছুটে আসলে নরপশুরা তাঁকেও গুলি করে হত্যা করে! এমনকি মামার নিজ গ্রামে (ধনপুর, কুমিল্লা সদর) তাঁকে দাফন করা যায়নি! রাতের অন্ধকারে কয়েক গ্রাম দূরে (বটগ্রাম) তাঁকে দাফন করতে হয়েছিলো! স্বাধীনতার ২০ বছর পর আমি বড় মামার কবর দেখে এসেছি!
আমাদের বড় মামা! আমরা কোন ভাইবোন (কাজিনসহ) তাঁকে দেখিনি! বড় মামার কথা উঠলেই মাকে কাঁদতে দেখেছি! ডিসেম্বর মাস আসলেই মায়ের কান্নার পরিমান বেড়ে যায়! ছেলে বেলায় আমরা যখন ব্যাপক উৎসাহে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালনে ব্যস্ত থাকতাম তখন অশ্রুসজল মাকে দেখতাম! বড় মামার স্মৃতি আমাদের নিকট মায়ের অশ্রুতেই সীমাবদ্ধ!
আমাদের মেঝো চাচা আবুল কালাম পুলিশ সদস্য হিসেবে চট্রগ্রামে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করেন। পরিবারের সবাই যখন ভেবেছিলেন তিনি শহীদ হয়েছেন; স্বাধীনতার প্রায় এক বছর পর আহত অবস্থায় তিনি বীরের খেতাবসহ ফিরে আসলেও দীর্ঘ ৪২ বছর পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষার প্রহর গুনলেও ফিরে আসেননি আমাদের মুক্তিযোদ্ধা বড় চাচা রহমত আলী! আমরা পরিবারের সদস্যরা এখনো জানিনা কোথায় তাঁর কবর!
আজ সারাদিন মাকে দেখলাম! মায়ের মাঝে আমার বড় মামা ও বড় চাচাকে খুঁজলাম! আজও অশ্রুসজল মাকে দেখলাম! আমার মায়ের কান্না এখনো থামেনি!
বড় মামা ও বড় চাচাসহ সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।।
মোহাম্মদ মজিবুর রহমান
সহযোগী অধ্যাপক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।