বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হচ্ছে আর মাত্র তিন দিন পর। দেশটির সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১ জুন থেকে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ থেকে ওই দেশে কর্মী যাওয়া বন্ধ হচ্ছে। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ হতে চললেও এখনো অনুমোদন পাওয়া কোটার ৪৯ হাজার ৮৭ জন বাংলাদেশি কর্মী দেশটিতে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এত কম সময়ে এই কর্মীদের দেশটিতে পাঠানো অসম্ভব।
এতে কর্মী ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, অনুমোদন পাওয়া সব কর্মীকে ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়া পাঠাবে মন্ত্রণালয়। সেই লক্ষ্যে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।
বিএমইটির তথ্যে দেখা গেছে, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে চলতি মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ জন কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে গত ২২ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়া গেছেন চার লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন কর্মী। বিএমইটির এই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এখনো ৪৯ হাজার ৮৭ জন কর্মী মালয়েশিয়া যাওয়া বাকি আছে। এই কর্মীদের দ্রুত বহির্গমনের জন্য গত ১৬ মে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কমিটিতে রয়েছেন বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পরিচালক ছাদেক আহমদ, সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. আবু রায়হান, উপপরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন সরকার ও সহকারী পরিচালক মালিক মোহাম্মদ তৈমুর গোফরান।
বায়রার পক্ষ থেকে এই কমিটিকে সহযোগিতা করছেন বায়রার নির্বাহী সদস্য মো. রুহুল আমীন স্বপন।
এদিকে অনুমোদন পাওয়া এসব কর্মীরা আদৌ মালয়েশিয়া যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, একদিকে রয়েছে হজ ফ্লাইটের চাপ, অন্যদিকে বিমানের টিকিটের দামও চড়া। ফলে এসব কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
তবে এসব কর্মী পাঠাতে সাধারণ ফ্লাইটের পাশাপাশি দুটি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়া সরকারকে আমাদের মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে, যাতে তারা আমাদের জন্য কিছুুদিন সময় বৃদ্ধি করে। তবে এখনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এ কারণে আমরা ৩১ মে মাথায় রেখে কাজ করছি। এর মধ্যে সাধারণ ফ্লাইটের পাশাপাশি দুটি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি ২৭ মে, আরেকটি ২৯ মে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি, এর মধ্যে আমরা সব কর্মীকে পাঠাতে পারব। তবে বিমানের টিকিটের মূল্য অনেক বেশি।’
চলতি মাসে বেড়েছে কর্মী যাওয়ার হার
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, তত কর্মী যাওয়ার হার বাড়ছে। বিএমইটির তথ্য মতে, জানুয়ারিতে ১৪ হাজার ৩৫২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ছয় হাজার ১১৫ জন, মার্চে ছয় হাজার ৩৮৩ জন এবং এপ্রিলে ১৭ হাজার ৮৭৭ জন কর্মী মালয়েশিয়া গেছেন। আর চলতি মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৪৬৭ জন কর্মী মালয়েশিয়া গেছেন। ৩১ মে পর্যন্ত বাকি ৪৯ হাজার ৮৭ জন কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারলে এ মাসে মালয়েশিয়া যাওয়া কর্মীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৬ হাজার ৫৫৪।
২১ মে পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে অনুমোদন
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধের ঘোষণা এলেও কর্মী যাওয়ার অনুমোদন দিচ্ছে সরকার। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত আট হাজার ১৯ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৯ ও ১৩ মে সবচেয়ে বেশি কর্মীকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই দুই দিনে মোট তিন হাজার ৩৬০ জন কর্মীকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এখনো কেন অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (কর্মসংস্থান-৩) গাজী মো. শাহেদ আনোয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২১ মে পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরপর আর অনুমোদন দেওয়া হয়নি।’
এখনো সাড়া মেলেনি বৈঠকের
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর বিষয়ে আলোচনার জন্য দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এখনো মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন উপসচিব গাজী মো. শাহেদ আনোয়ার।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাইকমিশন জানিয়েছে, তারা যোগাযোগ করেছে। তবে এ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। আমরা আমাদের এজেন্ডা ঠিক করছি। আশা করছি আগামী মাসের মধ্যে বৈঠক হবে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সময় বাড়াতে আমরা একটি চিঠি পাঠিয়েছি। তবে তারা যদি সময় না-ও বাড়ায় তাতেও সমস্যা হবে না। কারণ আমরা ৩১ মে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছি। চেষ্টা করছি এই সময়ের মধ্যে কোটার সব কর্মী পাঠানোর।’