মামলা জটিলতায় নষ্ট হচ্ছে শতকোটি টাকার ২৯৭টি গাড়ি। চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডের মূল্যবান জায়গা দখল করে এসব গাড়ি পড়ে থাকায় বন্দরের যেমন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি এসব গাড়ি ব্যবহার না হওয়ায় দেশ হারাচ্ছে রাজস্ব।
মামলা থাকায় ১৯৫টি গাড়ি যেমন নিলামে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, আবার বাকি ১০২টি গাড়ি আদৌ চলাচল উপযোগী রয়েছে কি না তা জানতে চাওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কাছে। অথচ এসব গাড়ি দ্রুত শেড থেকে সরিয়ে নিতে চাপ দিয়ে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, গত ২০ বছরের বেশি সময় চট্টগ্রাম বন্দরের শেডে পড়ে থাকা ২৯৭টি গাড়ির মধ্যে ১৯৫টির বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে উচ্চ আদালতে। অবশেষে বিষয়টি নিশ্চিত হতে পেরেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আমদানি করা এসব গাড়ি ডেলিভারি না হওয়ায় ঢাকা পড়ে ঘন জঙ্গলে। এগুলো সরিয়ে নিতে বন্দরের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হলে অনুসন্ধানে নামে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। এরপরই বেরিয়ে আসে মামলা সংক্রান্ত নানা তথ্য।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, যখন জাহাজ আসে, তখন আগের গাড়ির কারণে নতুন গাড়ি রাখতে হিমশিম খেতে হয়। পুরনো গাড়ি সরাতে পারলে জায়গা যেমন খালি হবে, তেমনি বাড়বে রাজস্বও।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন বলেন, আমদানিকারকের টাকা বাইরে ইতোমধ্যে চলে গেছে। কিন্তু এগুলো থেকে কাস্টমস কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। তাছাড়া গাড়িগুলো বর্তমানে চলাচলেরও অনুপযোগী।
মামলা জটিলতায় আটকে যাওয়া ১৯৫টি গাড়ি আপাতত নিলাম কিংবা স্ক্র্যাপ হিসেবে কেটে ফেলার সুযোগ থাকছে না। অপরদিকে মামলা না থাকা বাকি ১০২টি গাড়ি নিলামে তোলা যাবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। বিশেষ করে ২০ থেকে ২২ বছর আগে আমদানি করা এসব গাড়ি চলাচল উপযোগী কিনা তা নিশ্চিত হতে বিআরটিএর কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হবে। সেখানে ইতিবাচক ফলাফল এলেও প্রশ্ন থেকে যাবে পুরাতন ও জরাজীর্ণ গাড়ি রাস্তায় নামতে পারবে কি না তা নিয়ে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, যদি আইনি জটিলতায় নিলামে গাড়িগুলো বিক্রি করা সম্ভব না হয় ও চলাচলের অনুপযোগী হয়, তাহলে এগুলো ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।
এদিকে, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে গাড়িগুলো নিলাম কিংবা আমদানিকারকের বিপরীতে ছাড় করার ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) নেতারা।
বারভিডার সহসভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সরকার বেশি অর্থ পাওয়ার আশায় গাড়িগুলো নিলামে তোলার চেষ্টা করে। তবে এতে লাভ তো হয়ই না, উল্টো গাড়িগুলো আরও নষ্ট হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, শেডে দামি মডেলের প্রাইভেট কার-পাজেরো-মাইক্রোবাস, পিকআপ এবং ট্রাক রয়েছে।