সদা হাস্যোজ্জ্বল এক দীপ্ত প্রতীভা। উত্তম কুমার- নামটা শুনলেই চোখে ভাসে তার অবয়ব। তার ভুবন ভোলানো হাসি আজো মনে করেন সিনেমার দর্শক। আজো কোটি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন তিনি। মহানায়কের ৯৮তম জন্মদিন আজ।
বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই অভিনেতার জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার ভবানীপুরে। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা নায়কের আসল নাম অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়।
সংসারের হাল ধরতে শিক্ষাজীবন শেষ না করেই কলকাতা পোর্টে কেরানির চাকরি শুরু করেন উত্তম কুমার। সেখানে থেকেই মঞ্চে অভিনয়। এরপর অনেক পরিশ্রম করে চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠা পান সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের এই সন্তান।
প্রথম ছবি হিসেবে ‘দৃষ্টিদান’। এরপর ‘মায়াডোর’ ও ‘বসু পরিবার’। ১৯৫৩ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবি দিয়ে ঝড় তোলেন উত্তম। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ বাংলা চলচ্চিত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় উত্তম-সুচিত্রা জুটির সূত্রপাত হয়। শুরু হয় উত্তম যুগ। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ‘হারানো সুর’, ‘পথে হল দেরী’, ‘সপ্তপদী’, ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘বিপাশা’, ‘জীবন তৃষ্ণা’ আর ‘সাগরিকা’-এর মতো কালজয়ী সব ছবি করে হয়ে ওঠেন সবার মনের মহানায়ক। সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ও ‘চিড়িয়াখানা’ উত্তম কুমারের আরো দু’টি সেরা চলচ্চিত্র।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, উত্তম কুমারকে ভেবেই ‘নায়ক’ ছবি করার পরিকল্পনা করেছিলেন সত্যজিৎ রায়।
বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন এই কিংবদন্তি নায়ক। এর মধ্যে রয়েছে ‘ছোটিসি মুলাকাত’, ‘অমানুষ’, ‘আনন্দ আশ্রম’।
জনপ্রিয়তার তকমার বাইরেও তিনি ছিলেন ভীষণ কোমল হৃদয়ের প্রচণ্ড বিনয়ী এবং আন্তরিক। তিনি জনমানুষের কতখানি কাছের তিনি তা আজ শুনে কারও কাছে অবিশ্বাস্যও মনে হয়। একাধারে মেধাবী, প্রজ্ঞাবান, বিনয়ী, কোমল হৃদয় এবং দুর্দান্ত প্রতিভাবান এই অভিনেতা এতো বিখ্যাত হওয়া সত্বেও শ্যুটিং ইউনিটের অতি সাধারণ কর্মীরও দেখভাল করতেন। বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য তার ত্যাগ ছিল অবর্ণনীয়। চলচ্চিত্র থেকে উপার্জন করা সমস্ত অর্থ ফের বিনিয়োগ করেছেন চলচ্চিত্রেই। চলচ্চিত্র প্রযোজনায় তার প্রযোজিত বহু চলচ্চিত্র ফ্লপ তকমা পাওয়ার পরও ফের টাকা ঢালতে দ্বিধা বোধ করেননি। তিনি ছিলেন বাংলা সিনেমার সেরা আইকন।
বিয়ে করেন গৌরী দেবীকে। ১৯৬৩ সালে উত্তম কুমার তার পরিবার ছেড়ে চলে যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি তৎকালীন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে বসবাস করেন। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই কলকাতার টালিগঞ্জে মৃত্যুবরণ করেন। প্রয়াত হয়েও এখনো তিনি বাংলার মানুষের মনে মহানায়ক হয়েই আছেন।