করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে কারও কোনো কথায় কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের জীবনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েই সরকার করোনার টিকা আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। যারা এর সমালোচনা করছে, তাদের কথায় গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। সরকার ইতোমধ্যে টিকা দেওয়া শুরু করেছে। অনেক কথা শুনতে হয়! এসব কথায় কান দিলে চলবে না। মানুষের ভয়টা দূর করতে হবে।
বুধবার আওয়ামী যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ যাতে দ্রুত করোনাভাইরাসের টিকা পায়, সেটা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বলেন, ‘অনেকেই তো বলেছিল, বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আসবে না। অনেক উন্নত দেশও কিন্তু আনতে পারেনি। আমি কিন্তু কোনোদিকে তাকাইনি। আমার কাছে মানুষ সব থেকে বড়, মানুষের জীবন বড়। আমি যখন প্রথম ভ্যাকসিনের জন্য টাকা দিই, এক হাজার কোটি টাকা আলাদা রেখে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডভান্স করে দিয়েছিলাম। যেন যখনই ভ্যকসিন তৈরি হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা অনুমোদন দেবেন- সকলের আগে যেন বাংলাদেশ পায়। সেটাই আজকে প্রমাণিত সত্য।’
২০ লাখ ডোজ করোনার টিকা বাংলাদেশকে উপহার দেওয়ায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আরো অনেকেই দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের যেটা প্রয়োজন, আমরা কিন্তু নিয়ে এসেছি।
টিকা পাওয়ার পরও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকা নেওয়ার পরও কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হাত পরিষ্কার করতে হবে এবং সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এটা সবাইকেই নজরে রাখতে হবে।
শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথা স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক স্বৈরশাসকদের দুঃশাসনের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের মানুষের কোনো কল্যাণ করেনি। শুধু নিজেদের কল্যাণ করেছে। জিয়াউর রহমান, এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার কথা বলি, যারাই ক্ষমতায় এসেছেন- তারা নিজেদের ভাগ্যগড়া ও অর্থসম্পদ বানানো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। মানুষের জন্য তারা কিছুই করেননি। করলে যে করা যায়, সেটা আওয়ামী লীগই একমাত্র প্রমাণ করেছে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনার শুরু থেকে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। দুর্যোগ আসে, দুর্যোগ আসবে। কিন্তু সেই দুর্যোগের সময় শক্ত থাকতে হবে, মানুষের পাশে থাকতে হবে। পরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে, কাজ করতে হবে। তবেই যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করা যাবে। এজন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
এ প্রসঙ্গে করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যুবলীগ নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা দেখেছি করোনার সময় কেউ অসুস্থ হলে কিংবা বাবা-মা অসুস্থ হলে নিজের সন্তানও পাশে দাঁড়াননি। কিন্তু যুবলীগ কর্মীরা তাদের পাশে গেছেন। হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা তারাই করেছেন, এম্বুলেন্সে রোগী আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। মাস্ক বিতরণ করেছেন, ঘরে ঘরে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। তারা মরদেহ দাফন ও সৎকার করেছেন, কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ধান কেটে দিয়েছেন। কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল যাতে বাজারজাত করতে পারেন- যুবলীগ কর্মীরা সে ব্যবস্থাও করেছেন। আওয়ামী লীগের অন্য সংগঠনের কর্মীরাও এধরনের কাজ করেছেন।
যুবলীগের নতুন নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, তারা মানবতার জন্য এই কাজগুলো যে করেছেন, এটাই হচ্ছে সব থেকে বড়। মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও মানুষকে সাহায্য করা- এটাই সব থেকে বেশি প্রয়োজন। মানুষের সাহায্যে কাজ করে গেলে সেই সংগঠন টিকে থাকে। এজন্য আদর্শভিত্তিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।
একই সঙ্গে টিকা প্রদান কর্মসূচিতে সহযোগিতাসহ করোনা মোকাবিলায় মানুষকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে যুবলীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, টিকা নিয়ে প্রথম দিকে অনেকের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা ছিল। এখন তা কেটে গেছে। তারপরও এখানে যুবলীগের একটা দায়িত্ব রয়েছে। বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সের ওপরে যারা এবং শিক্ষক থেকে শুরু করে অন্যান্য যাদের সবসময় মানুষের পাশে কাজ করতে হয়- তাদের আগে করোনার টিকা দিতে হবে। মানুষের মাঝে ভয়টা দূর করতে হবে যেন সবাই ভ্যাকসিনটা নেন। সেই ব্যবস্থা করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। এটা যুবলীগ করবে, সেটাই আমি চাই।
জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তরুণদের প্রস্তুত হওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। কিন্তু আজকের তরুণরাই তো আগামী প্রজন্ম এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জাতির পিতার নেতৃত্বে সব সময় সব আন্দোলনে তরুণরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কাজেই তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।
টানা তিন মেয়াদের ১২ বছরে দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে তার সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ২০৪১ সাল পর্যন্ত এই দেশটা কেমন হবে তার পরিকল্পনা সরকার প্রণয়ন করেছে। ২১০০ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে- তার জন্য ডেল্টা প্ল্যান করা হয়েছে। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। এজন্য অনেক পথও পাড়ি দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকার গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দিচ্ছে। মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। ২৬ মার্চ থেকে দেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রবেশ করবে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হবে। যেহেতু করোনার কারণে কর্মসূচির পরিবর্তন হয়েছে, সেখানে আমরা জনসমাগম বাদ দিয়ে মানুষের জন্য কল্যাণমুখী কাজগুলোই করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জাতির জন্য ১২ বছর কিছুই নয়। কিন্তু তারপরও সরকার যেভাবে এই দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে, পথ দেখিয়ে যাচ্ছে- এই পথ ধরেই এগুনো গেলে এদেশ অবশ্যই উন্নত-সমৃদ্ধ হবে।
কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন প্রান্তে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে সামস পরশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ প্রমুখ।