রাজধানীসহ সারাদেশে অনুভূত শক্তিশালী ভূমিকম্পে শুক্রবার (২১ নভেম্বর) এখন পর্যন্ত ৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পুরান ঢাকায় ৩ জন, নারায়ণগঞ্জে ১ জন এবং নরসিংদীতে ২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি ভবন ও স্থাপনায় ফাটল দেখা গেছে।
পুরান ঢাকায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন, রাফিউল ইসলাম (আনুমানিক ২০ বছর) , আবদুর রহিম (৪৮) ও তাঁর ছেলে মেহরাব হোসেন (১২)। রূপগঞ্জে ফাতেমা নামে ১০ মাসের এক শিশু মারা গেছে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রাফিউল ইসলাম স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের শিক্ষার্থী বলে পরিবার জানিয়েছে। আবদুর রহিমের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রকোনায়। তিনি সুরিটোলা স্কুলের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
ভূমিকম্পে হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। শোকবার্তায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে আরেকজনের পরিচয় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ভূমিকম্পের সময় পুরান ঢাকার কসাইটুলী এলাকার একটি ভবনের রেলিং ধসে পড়ে তিনজন নিহত হন। তাঁরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান জানান, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে তিনজন মারা গেছেন। মিটফোর্ড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার সাজ্জাদ প্রথম আলোকে বলেন, ভূমিকম্পের পর তিনজনের মরদেহ আনা হয়েছে। পুরান ঢাকা থেকে তাঁদের মরদেহ আনা হয়।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে ফাতেমা নামের ১০ মাসের একটি শিশু নিহত হয়েছে। এ সময় শিশুটির মা কুলসুম বেগমসহ (৩০) দুজন আহত হন। সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ ৫ নম্বর ক্যানেল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত দুই শতাধিক
ভূমিকম্পে ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুরে দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভূমিকম্পে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ জন আহত হয়েছেন। গাজীপুরের তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত হয়েছেন ১০ জন।
ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ভবন থেকে লাফ দিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত চার শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
নরসিংদী জেলা হাসপাতালে আহত ৪৫ জনের মধ্যে তিনজনকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। নরসিংদী ১০০ শয্যা হাসপাতালে আহত হয়েছেন ১০ জন। টেলিফোনে হতাহতের এসব খবর জানা গেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।
গাজীপুরের শ্রীপুরে ভূমিকম্পের সময় কেওয়া পূর্বখণ্ড গারোপাড়া এলাকায় বহুতল ভবনে ডেনিমেক নামের একটি পোশাক কারখানায় থেকে তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে দেড় শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন।
নরসিংদীতে সানশেড ভেঙে পড়ে নিহত ২
নরসিংদীর সদর উপজেলার গাবতলি এলাকায় ভূমিকম্পের সময় বাড়ির সানশেড ভেঙে পড়ে ওমর (১০) নামে এক শিশু এবং ৭৫ বছর বয়সি এক বৃদ্ধ নিহত হন। শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ওমরের চাচা জাকির হোসেন বলেন, ‘ভূমিকম্প শুরু হলে দেলোয়ার হোসেন তিন সন্তানকে নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ঠিক তখনই সানশেড ভেঙে পড়ে তাদের ওপর।’
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে বাবা ও ছেলেকে ঢামেকে আনা হলে চিকিৎসক ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন। ওমরের দুই বোন নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফারুক বলেন, ‘ভূমিকম্পে বাবা-ছেলেকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক ছেলেটিকে মৃত ঘোষণা করেন। বাবা সংকটাপন্ন অবস্থায় ভর্তি আছেন।’
অপরদিকে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার মালিতা গ্রামে ভূমিকম্পে মাটির ঘরের দেওয়াল ধ্বসে ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধ নিহত হন।
এ ছাড়া রূপগঞ্জে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে কুলসুম বেগম তাঁর মেয়ে ফাতেমাকে কোলে নিয়ে বাড়ির বাইরে দৌড়ে আসেন। এ সময় প্রতিবেশী জেসমিন বেগমও (৩৫) ঘর থেকে বের হয়ে সড়কে এসে আশ্রয় নেন। ঠিক তখনই সড়কের পাশে থাকা একটি সীমানাপ্রাচীর ধসে তাঁদের ওপর পড়ে। ইটের চাপায় ঘটনাস্থলেই শিশু ফাতেমা নিহত হয়। আশপাশের লোকজন তাঁদের উদ্ধার করেন। আহত অবস্থায় কুলসুম বেগম ও জেসমিন বেগমকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আজ সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। ভূমিকম্পটিকে মাঝারি মাত্রার বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।