সাতক্ষীরার উৎপাদিত সরিষা ফুলের মধু ভারতে রফতানি করা হচ্ছে। গত বছর ২০০ টন মধু দেশটিতে রফতানি করেন সাতক্ষীরার মধু রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স শিমু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ মৌমাছি পালন সমিতির সভাপতি মো. আফজাল হোসেন। এ বছর তিনি ৩০০-৩৫০ টন সরিষা ফুলের মধু ভারতে রফতানির আশা করছেন।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষা ফুলের মধু উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ টন।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের মৌচাষী আইয়ুব হোসেন জানান, ১০-১২ বছর ধরে তিনি সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করেন। স্থানীয় ছাড়াও জেলার বাইরে তিনি মৌবক্স স্থাপন করে সরিষা ফুলের মধু আহরণ করেন।
আইয়ুব হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে ২৫০টি বক্স বসিয়েছেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা সদরের সরিষা ক্ষেতে। এসব বক্সে অন্তত তিন টন মধু সংগ্রহ হবে, যার বাজারমূল্য ৫৮-৬০ হাজার টাকা।
সাতক্ষীরা সদরের কাথণ্ডা গ্রামের মৌচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে কাথণ্ডা সরিষা মাঠে ২০০ মৌবক্স বসিয়েছেন মধু আহরণের জন্য। গত বছর এ মাঠে একই পরিমাণ মৌবক্স বসিয়ে প্রায় ২ টন ৬০০ কেজি সরিষা মধু সংগ্রহ করেন তিনি।
সাতক্ষীরার মধু রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স শিমু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ মৌমাছি পালন সমিতির সভাপতি মো. আফজাল হোসেন বলেন, মধু উৎপাদনে খুবই সম্ভাবনাময় জেলা সাতক্ষীরা। কুল, সরিষা ও আম মুকুলের মৌসুমে প্রচুর পরিমাণ মধু আহরণ করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মধু সংগ্রহ করা হয় সরিষা ফুল থেকে। এসব মধুর বেশির ভাগ ভারতে রফতানি করা হয়।
তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ভারতে মধু রফতানি শুরু হয়। বছরে ৫০০ টন মধুর চাহিদা রয়েছে ভারতে। সরিষা ফুলের মধু ভারতে রফতানি মূল্য প্রতি মণ সাড়ে ৫ হাজার টাকা। মধু রফতানিতে সরকারের ভর্তুকি পাওয়া যায় আরো ২০ শতাংশ।
আফজাল হোসেন আরো বলেন, মৌমাছি পালনের পাশাপাশি ছয়-সাত বছর ধরে ভারতে মধু রফতানি করছি। গত মৌসুমে ২০০ টন মধু ভারতে রফতানি করেছিলাম। চলতি মৌসুমে ৩০০-৩৫০ সরিষা ফুলের মধু ভারতে রফতানির আশা রয়েছে। এজন্য গাজীপুর জেলায় মধু প্রসেসিং ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছেন তিনি। তাছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকার মধুচাষীর কাছ থেকে মধু সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করেন।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূরুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষা ফুলের মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ টন। সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমির সরিষা ক্ষেতে তিন হাজার মৌবক্স বসানো হয়েছে। প্রতি বক্সে সর্বনিম্ন ১২ কেজি করে মধু সংগ্রহ হবে আশা করছেন তিনি।
নূরুল ইসলাম জানান, এরই মধ্যে জেলার বেশকিছু সরিষাচাষীকে পরামর্শও দেয়া হয়েছে, তারা যেন মৌখামারিদের সহযোগিতা করেন। কারণ অনেক চাষী না জেনে সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌবক্স বসাতে দিতে চান না। তারা মনে করেন, মৌমাছি ফুলে বসলে হয়তো সরিষার উৎপাদন কম হবে। কিন্তু বাস্তবে মৌমাছি ফুলে পরাগায়ন করলে সরিষার ফলন ভালো হয়। অন্যদিকে ফুল থেকে মধু আহরণ করে মৌমাছি।