ভারতের দিল্লিতে মেট্রো স্টেশন, গণপরিবহন ও বাজার থেকে চুরি হওয়া মুঠোফোন বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছে। দিল্লি পুলিশের অভিযানে এমন একটি চক্রের সন্ধান মিলেছে। পুলিশ এই চক্রের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ বলছে, দিল্লির মেট্রো স্টেশন, গণপরিবহন ও ভিড়পূর্ণ বাজার থেকে মুঠোফোন চুরি করে দ্রুত শহরের বাইরে সরিয়ে নেওয়া হয়, যাতে কোনো প্রমাণ না থাকে। এরপর সেগুলো বাংলাদেশে পাচার করা হয়। এভাবেই একটি আন্তর্জাতিক চক্র কাজ করছিল।
রবিবার (১০ মার্চ) দিল্লি পুলিশের অপরাধ বিভাগ এই চক্রটিকে ধরতে সক্ষম হয়েছে। অভিযানে পশ্চিমবঙ্গের এক চোরাকারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রায় ২০ লাখ রুপি মূল্যের ৪৮টি দামি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম আবদুশ (২৪)। তাকে উত্তর দিল্লির কোটওয়ালির সালিমগড় বাইপাসের কাছে আটক করা হয়। চুরি হওয়া মুঠোফোনের একটি চালান নিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি, ওই সময় পুলিশ তাকে আটক করে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, আবদুশ এই বড় চক্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, যারা বড় পরিসরে মোবাইল ফোন চুরি, পাচার এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বেআইনিভাবে বিক্রির সঙ্গে যুক্ত।
দিল্লি পুলিশের অপরাধ বিভাগ বলছে, বেশ কয়েকটি চক্র রাজধানীর মেট্রো স্টেশন, গণপরিবহন এবং জনাকীর্ণ বাজারে মোবাইল চুরি করছে এবং সেগুলো বাংলাদেশ বা নেপালে পাচার করছে।
অপরাধ দমন শাখার ডেপুটি কমিশনার আদিত্য গৌতম বলেন, এই চক্রটি চুরি হওয়া মোবাইল ফোন খুব দ্রুত দিল্লি–এনসিআর এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলত, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের শনাক্ত করতে না পারে। একবার মুঠোফোন চুরি হয়ে গেলে, সেগুলো কখনোই স্থানীয়ভাবে বিক্রি বা ব্যবহার করা হতো না, যাতে সহজে ধরা না পড়ে। বরং, এগুলো চোরাকারবারিদের কাছে তুলে দেওয়া হতো, এরা প্রতিটি ফোন মাত্র ২০০০–৩০০০ রুপিতে কিনত।
এরপর এই ফোনগুলোর বড় চালান পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হতো। সেখানে ফোনগুলোর কিছু কিছু পরিবর্তন করা হতো এবং এরপর সেগুলো বাংলাদেশে পাঠানো হতো। এই মুঠোফোনগুলো বাংলাদেশে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার রুপিতে বিক্রি করা হতো বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা আদিত্য।
আবদুশ নামে এক ব্যক্তি চুরি হওয়া মোবাইল ফোনের একটি বড় চালান পশ্চিমবঙ্গে পাচার করতে যাচ্ছেন—এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সালিমগড় বাইপাসে ওঁত পেতে থাকে। আবদুশ পুলিশ উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে ধরে ফেলা হয়। তার ব্যাগ তল্লাশি করে ৪৮টি মুঠোফোনইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
আবদুশের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, তিনি দেড় বছর ধরে চুরি হওয়া মোবাইল পাচারের সঙ্গে জড়িত।
ডিসিপি গৌতম বলেন, আবদুশ আর্থিক সমস্যায় ভুগছিলেন। দ্রুত টাকা আয়ের উপায় খুঁজতে গিয়ে ২০২৩ সালে অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমে মোবাইল ফোনের স্ক্র্যাপ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ সময়ে তাঁর পরিচয় হয় চোরাই মোবাইল ব্যবসার মূল হোতা সামির ও সেলিমের সঙ্গে। সুযোগ বুঝে তাদের কাছ থেকে কম দামে চুরি হওয়া মুঠোফোন কিনতে শুরু করেন। এরপর পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতেন এবং কিছু মোবাইল বাংলাদেশে পাচার করতেন।
আবদুশ স্বীকার করেছেন, গত দেড় বছরে তিনি দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গে ৮০০ টিরও বেশি চুরি হওয়া মুঠোফোন পাচার করেছেন।