ভারতের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

নয়াদিল্লি-ঢাকার ইতিবাচক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উভয় দেশের জনগণের উপকারে আসতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ভারতের গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত মতামত কলামে এ কথা জানান তিনি। বৃহস্পতিবার( ৬ ফেব্রুয়ারি) দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই মতামত কলাম প্রকাশিত হয়েছে।

কলামে উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ‘ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে একটি কার্যকর ও ইতিবাচক সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ।’ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ভারতও বাংলাদেশের এই ইচ্ছায় সায় দেবে।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে উৎখাত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর এক ক্রান্তিলগ্নে পৌঁছায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক। তবে দুই দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন উপদেষ্টা। তিনি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী। ভুল বোঝাবুঝি ও অস্থিরতার জায়গাগুলো নিরসনের মাধ্যমে সম্পর্কের ইতিবাচক দিকগুলোকে কাজে লাগানোর কথাও বলেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান শুরু থেকেই স্পষ্ট। ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক সম্মানবোধের ভিত্তিতে একটি ইতিবাচক ও কার্যকর সম্পর্ক চাই আমরা। আমরা আশা করি, ভারতও আমাদের এই ইচ্ছার সঙ্গে সুর মেলাবে।

ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির সফরকে ‘ইতিবাচক উদ্যোগ’ বলে অভিহিত করেন তিনি।

বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার ধারা শুরু হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা তৌহিদ আশা করেন, এর ধারাবাহিকতায় উভয় দেশের মানুষই উপকৃত হবে।

উপদেষ্টা তৌহিদ উল্লেখ করেন, ভারতে বাংলাদেশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে অনেক উচ্চবাচ্য হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে তিনি দাবি করেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত ক্ষমতা শূন্যতার সময়টুকুতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল না। যার ফলে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।

তৌহিদ আরও দাবি করেন, যারা এতে প্রভাবিত হয়েছেন, তারা সবাই আগের সরকারের সুবিধাভোগী এবং বেশিরভাগই মুসলমান। ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকার এসব অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়। এমনকি সারাদেশের জনগণও সাহসিকতার সঙ্গে হিন্দু ধর্মাবলম্বী, তাদের পরিবার ও মন্দিরের সুরক্ষা দিতে এগিয়ে আসে।

তা সত্ত্বেও ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতের গণমাধ্যম ও সাইবারস্পেস বড় আকারে অতিরঞ্জিত ও প্রায়শই পুরোপুরি ভুয়া তথ্য প্রকাশ করে নেতিবাচক আবহ সৃষ্টি অব্যাহত রাখে’, যোগ করেন তিনি।

তৌহিদ দাবি করেন, সব ধর্মবিশ্বাসের মানুষের অধিকারের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অন্য সব নাগরিকের সমান অধিকার ভোগ করে থাকেন। বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ এশিয়া তথা সারাবিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল হতে চাই। বাংলাদেশে এখন কী হচ্ছে তা নির্বিঘ্নে পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমরা ভারতের সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানাই। ভারতের জনগণ তাদের পক্ষপাতহীন তদন্ত থেকে প্রকৃত সত্য জানতে পারবেন।’

অন্তর্বর্তী সরকার সার্ক জোটকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে বলেও জানান তৌহিদ। তিনি উল্লেখ করেন, প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই সংস্থার কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই।

তবে এ বিষয়ে ভারতের কাছ থেকে এখনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করেন তৌহিদ। বলেন, ‘আমরা মনে করি না এই উদ্যোগে ভারতের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ আছে। আমরা জানি, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছাতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। তবে হাজারো মাইলের যাত্রা ছোট একটি পদক্ষেপের মাধ্যমেই শুরু হয়। প্রথম ধাপ হিসেবে আমরা কি পারি না এ অঞ্চলের সব নেতাদের পরবর্তী কোনো বৈশ্বিক সম্মেলনে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে একটি ছবি তুলতে, যা আমাদের আঞ্চলিক সহযোগিতার দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকারের স্বদিচ্ছা প্রকাশ করবে ‘

বিভিন্ন সমস্যা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের সম্পর্কে কিছু ইতিবাচক লক্ষণ দেখা গেছে বলে মত দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ। উদাহরণ হিসেবে তিনি নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির ত্রিপাক্ষিক চুক্তি ও দুই দেশের জেলে-বিনিময়ের ঘটনাগুলো উল্লেখ করেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, এই ইতিবাচক উদ্যোগগুলোর ওপর ভিত্তি করে এমন একটি অংশীদারিত্ব তৈরি হবে, যা দুই দেশের মানুষ, এই অঞ্চল ও বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের জন্য মঙ্গলজনক। এ ক্ষেত্রে একটি ভালো উদ্যোগ হতে পারে সীমান্তে নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষদের গুলি করে হত্যার ধারা থেকে বের হয়ে আসা। দুই দেশের মানুষ ইতিবাচক সম্পর্ক থেকে এত বেশি অর্জন করতে পারে যে, এই সুযোগের সদ্ব্যবহার না করার কোনো বাস্তবসম্মত কারণ নেই।’

 

Comments (0)
Add Comment