ভক্সওয়াগন বনাম টেসলা : ভবিষ্যতের গাড়ি শিল্পের দৌড়ে কে এগিয়ে

মো. সাইফুল আলম তালুকদার
ভক্সওয়াগন বনাম টেসলা : ভবিষ্যতের গাড়ি শিল্পের দৌড়ে কে এগিয়ে

গাড়ি শিল্পের কথা আসলেই প্রথম সারির কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ভক্সওয়াগন এবং টেসলা। ভক্সওয়াগন দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাপী গাড়ি বাজারে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে, তবে টেসলা ইলেকট্রিক গাড়ির বিপ্লব ঘটিয়ে সম্পূর্ণ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বর্তমান বাজার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই দুটি কোম্পানি ভিন্নভাবে সফল হলেও, ভবিষ্যতের দৌড়ে কার অবস্থান কতটা শক্তিশালী তা বুঝতে হলে কিছু বিষয় গভীরভাবে দেখতে হবে।

রাজস্বের তুলনা : ভক্সওয়াগন দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি শিল্পের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড়। ২০২৪ সালের হিসেবে কোম্পানিটির বার্ষিক রাজস্ব ৩২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে টেসলার রাজস্ব মাত্র ৯৭.৬৯ বিলিয়ন ডলার। তবে যদি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে দেখা হয়, তাহলে টেসলার অর্জন রীতিমতো বিস্ময়কর। ২০১৩ সালে টেসলার রাজস্ব ছিল মাত্র ৩.২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালে এসে ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে! অন্যদিকে, ভক্সওয়াগনের রাজস্ব বাড়লেও এটি ছিল তুলনামূলক ধীরগতির।

বাজার মূলধন ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা : বাজার মূলধন একটি কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার অন্যতম সূচক। এই দিক থেকে টেসলা বাজারকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। ২০১৩ সালে টেসলার বাজারমূল্য ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারে! অপরদিকে, ভক্সওয়াগনের বাজারমূল্য একই সময়ে ৮০ বিলিয়ন ডলার থেকে মাত্র ১০৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

এখান থেকেই বোঝা যায় যে, বিনিয়োগকারীদের কাছে টেসলা এখন বেশি আকর্ষণীয়। এর কারণ হলো, টেসলা শুধু একটি গাড়ি কোম্পানি নয়, এটি মূলত একটি প্রযুক্তি কোম্পানি যা স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, ব্যাটারি প্রযুক্তি এবং নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে কাজ করছে।

প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের দৌড়ে কে এগিয়ে : ভক্সওয়াগন মূলত জ্বালানী সাশ্রয়ী এবং ডিজেল ও পেট্রোলচালিত গাড়ি তৈরির জন্য বিখ্যাত। যদিও তারা ইলেকট্রিক গাড়ির দিকে কিছুটা এগোচ্ছে, তবে এখনো এটি টেসলার মতো আগ্রাসীভাবে ইলেকট্রিক গাড়ির দিকে ঝুঁকেনি। টেসলা সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা এবং তাদের স্বশাসিত চালিত প্রযুক্তি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম উন্নত প্রযুক্তি। ‌

টেসলার অটোপাইলট এবং পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় চালিত প্রযুক্তি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত স্বচালিত গাড়ি প্রযুক্তির মধ্যে একটি। অন্যদিকে, ভক্সওয়াগন এখনো তাদের প্রচলিত গাড়ি প্রযুক্তির উপর বেশি নির্ভরশীল, যদিও তারা আইডি সিরিজের ইলেকট্রিক গাড়ি বাজারে এনেছে।

গাড়ি বিক্রির পরিসংখ্যান: যদি শুধুমাত্র বিক্রির সংখ্যা বিবেচনা করা হয়, তাহলে এখনো ভক্সওয়াগন অনেক এগিয়ে। বিশ্বব্যাপী ভক্সওয়াগন প্রতি বছর ৯-১০ মিলিয়ন গাড়ি বিক্রি করে থাকে, যেখানে টেসলা বিক্রি করে মাত্র ১.৮ মিলিয়ন গাড়ি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, টেসলা যেভাবে ইলেকট্রিক গাড়ির বাজার দখল করছে, তাতে ভবিষ্যতে এই ব্যবধান দ্রুত কমে আসতে পারে।

ভক্সওয়াগন ও টেসলার গাড়ির বাজার কোথায় কোথায় বিস্তৃত : ভক্সওয়াগন এবং টেসলা উভয়েই বৈশ্বিক বাজারে বিশাল প্রভাব বিস্তার করেছে। তবে, তাদের বাজার কাঠামো ও প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে আলাদা আলাদা। চলুন দেখি, বিশ্বের কোথায় এই দুই কোম্পানির গাড়ি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

ভক্সওয়াগনের বাজার বিস্তৃতি : ভক্সওয়াগন একটি বৈশ্বিক অটোমোবাইল জায়ান্ট যার ব্যবসা প্রায় ১৫০টির বেশি দেশে বিস্তৃত। তাদের প্রধান বাজারগুলো হলো—

১. ইউরোপ:
– ভক্সওয়াগন ইউরোপের বৃহত্তম গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।
– জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও স্পেনে ভক্সওয়াগনের বিক্রি অত্যন্ত বেশি।
– ভক্সওয়াগনের গলফ, পোলো, পাসাত, তিগুয়ান মডেলগুলো ইউরোপে ব্যাপক জনপ্রিয়।
– বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য ভক্সওয়াগনের আইডি সিরিজ ইউরোপে টেসলার বিকল্প হিসেবে বাজার ধরতে শুরু করেছে।

২. চীন:
– চীন ভক্সওয়াগনের সবচেয়ে বড় বাজার, যেখানে প্রতি বছর ৩০-৪০ লাখ গাড়ি বিক্রি হয়।
– ভক্সওয়াগন চীনে স্থানীয় উৎপাদন কারখানা স্থাপন করেছে, যার মাধ্যমে তাদের গাড়ি বিক্রি আরও সহজ হয়েছে।

৩. উত্তর আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা):
– যদিও যুক্তরাষ্ট্রে টেসলা জনপ্রিয়, তবে ভক্সওয়াগন তাদের এসইউভি ও সেডান মডেল দিয়ে মার্কিন বাজারে ভালো অবস্থান ধরে রেখেছে।
– ভক্সওয়াগনের জেত্তা, এটলাস, তিগুয়ান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ জনপ্রিয়।

৪. দক্ষিণ আমেরিকা:
– ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় ভক্সওয়াগন শক্তিশালী বাজার ধরে রেখেছে।
– ভক্সওয়াগন গল দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম জনপ্রিয় গাড়ি।

৫. ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া:
– ভারতে ভক্সওয়াগন তুলনামূলক কম জনপ্রিয় হলেও, ভক্সওয়াগন ভার্টাস, তিগুয়ান, পোলো কিছু অংশে ভালো বিক্রি হয়।
– বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে ভক্সওয়াগনের সরাসরি উৎপাদন নেই, তবে কিছু নির্দিষ্ট মডেল আমদানি করা হয়।

টেসলার বাজার বিস্তৃতি:-

টেসলা একটি নতুন প্রজন্মের ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা যার ব্যবসা দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের মূল বাজারগুলো হলো —

১. উত্তর আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা):
– টেসলার সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে প্রতি বছর ৬-৭ লাখ গাড়ি বিক্রি হয়।
– ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক ও টেক্সাসে টেসলা সবচেয়ে জনপ্রিয়।
– টেসলার মডেল-৩, মডেল-ওয়াই, মডেল-এস এই অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়।

২. চীন:
– চীন টেসলার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার, যেখানে প্রতি বছর ৫-৬ লাখ গাড়ি বিক্রি হয়।
– টেসলা চীনে তাদের নিজস্ব কারখানা গিগা সাংহাই তৈরি করেছে, যা স্থানীয় উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে।
– চীনের বাজারে টেসলা মডেল-তিন ও মডেল-ওয়াই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।

৩. ইউরোপ:
– নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে টেসলা দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
– ইউরোপীয় বাজারে টেসলা মডেল-ওয়াই ইলেকট্রিক গাড়ি বিক্রিতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
– টেসলার গিগা বার্লিন কারখানা চালু হওয়ার ফলে ইউরোপীয় বাজারে টেসলার সরবরাহ আরও বেড়েছে।

৪. মধ্যপ্রাচ্য:
– দুবাই, সৌদি আরব ও কাতারে টেসলা ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় হচ্ছে।
– মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ তাদের জ্বালানি-ভিত্তিক অর্থনীতি থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পে রূপান্তর করছে, যা টেসলার জন্য সুযোগ তৈরি করছে।

৫. অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়া-প্যাসিফিক:
– অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরেও টেসলা দ্রুত প্রবেশ করছে।
– জাপানে প্রচলিত ব্র্যান্ড টয়োটা ও হোন্ডা শক্তিশালী থাকলেও, টেসলা ধীরে ধীরে বাজার দখল করছে।

ভক্সওয়াগন ও টেসলা গাড়ির দাম ও স্থায়িত্ব : গাড়ি কেনার সময় মূলত দাম, স্থায়িত্ব, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, এবং পুনরায় বিক্রি করার দাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভক্সসওয়াগন এবং টেসলার গাড়ির দাম এবং স্থায়িত্বের তুলনা করলে দেখা যায়, উভয়েরই আলাদা আলাদা সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

ভক্সসওয়াগন গাড়ির দাম : গাড়ির দাম বাজার, মডেল, এবং প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে। সাধারণত ভক্সসওয়াগনের গাড়িগুলো তুলনামূলক সাশ্রয়ী, যেখানে টেসলা উচ্চ-প্রযুক্তির কারণে কিছুটা ব্যয়বহুল।

১. ভক্সসওয়াগন পোলো: ১৮,০০০ ডলার থেকে শুরু (অবশ্যই শুল্ক ছাড়া)।‌
২. ভক্সসওয়াগন জেত্তা: ২২,০০০ ডলার থেকে থেকে শুরু।‌
৩. ভক্সসওয়াগন গল্প: ২৬,০০০ ডলার থেকে থেকে শুরু।‌
৪. ভক্সসওয়াগন তিগুয়ান (এসইউভি): ২৯,০০০ ডলার থেকে থেকে শুরু।‌
৫. ভক্সসওয়াগন পাসাত: ৩০,০০০ ডলার থেকে শুরু থেকে শুরু।‌
৬. ভক্সসওয়াগন আইডি.৪ (বৈদ্যুতিক এসইউভি): ৪০,০০০ ডলার থেকে থেকে শুরু।

টেসলার জনপ্রিয় মডেলের দাম (যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাজার):-

১. টেসলা মডেল-তিন: ৩৯,০০০ ডলার থেকে শুরু (অবশ্যই শুল্কবাদ দিয়ে)
২. টেসলা মডেল-ওয়াই (এসইউভি): ৪৭,০০০ ডলার থেকে শুরু।
৩. টেসলা সাইবার ট্রাক (বৈদ্যুতিক পিক আপ ট্রাক): ৬০,০০০ ডলার থেকে শুরু।‌
৪. টেসলা মডেল-এস (লাক্সারি সেডান): ৭৫,০০০ ডলার থেকে শুরু।
৫. টেসলা মডেল-এক্স (লাক্সারি এসইউভি): ৮০,০০০ ডলার থেকে শুরু।‌

গাড়ির স্থায়িত্ব ও দীর্ঘমেয়াদী পারফরম্যান্স : গাড়ির স্থায়িত্ব নির্ভর করে ইঞ্জিনের গুণগত মান, ব্যাটারির স্থায়িত্ব, এবং রক্ষণাবেক্ষণের সহজলভ্যতার ওপর।

ভক্সওয়াগনের স্থায়িত্ব
– ভক্সওয়াগন গাড়ি সাধারণত ১০-১৫ বছর টিকে থাকে এবং প্রায় ২,৫০,০০০ কি.মি পর্যন্ত চলতে পারে।
– ডিজেল ও পেট্রোল ইঞ্জিন দীর্ঘস্থায়ী, তবে সময়ের সাথে সাথে বেশি রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন হয়।
– ভক্সওয়াগনের গাড়িগুলো গুণগত মানের দিক থেকে নির্ভরযোগ্য, তবে জার্মান ইঞ্জিনিয়ারিং হওয়ায় মেরামতের খরচ কিছুটা বেশি।
– ইউরোপীয় গাড়ি হওয়ায় খুচরা যন্ত্রাংশ কিছু কিছু অঞ্চলে ব্যয়বহুল।

টেসলার স্থায়িত্ব
– টেসলা মূলত বৈদ্যুতিক গাড়ি, তাই ইঞ্জিনের পরিবর্তে ব্যাটারি ও মোটর টেকসই হতে হয়।
– টেসলার ব্যাটারির গড় আয়ু ১৫-২০ বছর বা ৫,০০,০০০ কি.মি পর্যন্ত চলতে পারে।
– টেসলার ব্যাটারি পরিবর্তনের খরচ অনেক বেশি। এটি প্রায় ১০,০০০-২০,০০০ ডলার পর্যন্ত দাম নেয়, তবে সাধারণত ১০ বছর পর এটি পরিবর্তনের দরকার হয়।
– যেহেতু টেসলা বৈদ্যুতিক গাড়ি, তাই এতে কম যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেয় এবং তেল পরিবর্তন বা ইঞ্জিন সার্ভিসিংয়ের প্রয়োজন হয় না।
– বৈদ্যুতিক গাড়ি হওয়ায় শীতপ্রধান অঞ্চলে পারফরম্যান্স কিছুটা কমে যেতে পারে।

রক্ষণাবেক্ষণ খরচ
ভক্সওয়াগন এবং টেসলা গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় তুলনা করলে দেখা যায়, টেসলার নিয়মিত মেরামতের খরচ কম, তবে বড় কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে ব্যয় বেশি।

– ভক্সওয়াগনের গড় বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ প্রায় ৮০০-১২০০ ডলার।
– টেসলার গড় বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ প্রায় ৪০০-৬০০ ডলার।

যেহেতু টেসলা বৈদ্যুতিক গাড়ি, তাই এতে ইঞ্জিন তেল পরিবর্তন, স্পার্ক প্লাগ, ট্রান্সমিশন ফ্লুইড ইত্যাদির দরকার হয় না, ফলে নিয়মিত খরচ কম। তবে ব্যাটারি বা মোটর নষ্ট হলে এককালীন বড় অঙ্কের খরচ পড়তে পারে।

পুনঃবিক্রয় মূল্য
গাড়ি কেনার সময় পুনঃবিক্রয় মূল্যও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ভক্সওয়াগনের পুনঃবিক্রয় মূল্য
– ভক্সওয়াগনের গাড়ি সাধারণত ৫ বছরে ৪০-৫০ শতাংশ মূল্য হারায়।
– ডিজেল ও পেট্রোল গাড়ির ক্ষেত্রে পুরোনো মডেল দ্রুত মূল্য হারায়।
– ভক্সওয়াগনের ইলেকট্রিক মডেল (আইডি সিরিজ) এখনো বাজারে নতুন, তাই পুনঃবিক্রয় মূল্য নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

টেসলার পুনঃবিক্রয় মূল্য
– টেসলার গাড়ি ৫ বছরে মাত্র ২০-৩০ শতাংশ মূল্য হারায়, যা অন্যান্য গাড়ির তুলনায় অনেক কম।
– টেসলার সফটওয়্যার আপডেট হয়, তাই পুরোনো মডেলও আধুনিক ফিচার পায়, ফলে দাম ভালো থাকে।
– বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার বৃদ্ধির কারণে ভবিষ্যতে টেসলার পুরোনো গাড়ির চাহিদা আরও বাড়তে পারে।

তাহলে কোনটি বেছে নেবেন 

ভক্সওয়াগন
– দাম তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী।
– জ্বালানি চালিত ও হাইব্রিড বিকল্প রয়েছে।
– স্থায়িত্ব ১০-১৫ বছর।
– রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি।‌
– পুনঃবিক্রয় মূল্য দ্রুত কমে যায়।‌

টেসলা:
– দাম বেশি তবে দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী।
– সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক, কোনো তেল পরিবর্তনের ঝামেলা নেই।
– স্থায়িত্ব ১৫-২০ বছর।
– কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ। তবে ব্যাটারি পরিবর্তন ব্যয়বহুল।
– পুনঃবিক্রয় মূল্য বেশি এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নতি হতে পারে।

যদি আপনি সাশ্রয়ী মূল্যের, নির্ভরযোগ্য ও প্রচলিত জ্বালানি চালিত গাড়ি চান, তবে ভক্সওয়াগন ভালো বিকল্প। কিন্তু যদি আপনি ভবিষ্যৎপ্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক বৈদ্যুতিক গাড়ি চান, তবে টেসলা বেছে নেওয়া ভালো।

তাহলে বাজার দখলে কে এগিয়ে

ভক্সওয়াগনের বাজার বহু দেশে প্রতিষ্ঠিত ও ব্যাপক বিস্তৃত।
– টেসলার বাজার তুলনামূলক ছোট হলেও এটি দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপে।
– টেসলার প্রবৃদ্ধির হার বেশি, এবং ইলেকট্রিক গাড়ির প্রতি আগ্রহ বাড়ায় ভবিষ্যতে এটি আরও বিস্তৃত হতে পারে।

অতএব, বর্তমানে ভক্সওয়াগন বাজারে এগিয়ে থাকলেও, ভবিষ্যতে টেসলা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে এবং যেভাবে এটি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা প্রমাণ করে যে ভবিষ্যৎ ইলেকট্রিক গাড়ির দিকেই যাচ্ছে।

অতএব, যদি আপনি গাড়ির বর্তমান রাজস্ব ও বিক্রির পরিসংখ্যান দেখেন, তাহলে ভক্সওয়াগন এগিয়ে। কিন্তু বাজার মূলধন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তি বিবেচনা করলে টেসলা পরিষ্কারভাবে এগিয়ে আছে। ‌

লেখক : মো. সাইফুল আলম তালুকদার
রিটেইল ব্যাংকার
বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি

Comments (0)
Add Comment