ব্যবহৃত মোটরসাইকেল কেনার আগে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে যানজটের ভিড়ে মোটরসাইকেল এখন দ্রুত চলাচলের অন্যতম সহজ মাধ্যম। তবে নতুন বাইকের দাম সবার নাগালে না-ও থাকতে পারে। এ কারণে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের বাজার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু সাবধানতা ছাড়া এমন বাইক কেনা বিপদের কারণ হতে পারে।

১. বাইকের ধরন ও মডেল সম্পর্কে জেনে নিন

  • আগে থেকেই নিজের বাজেট ও চাহিদা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট মডেল বেছে নিন।
  • সম্ভব হলে নতুন বাইকের একটি মডেল দেখে নিন যাতে তুলনা সহজ হয়।

  • বাইক কত বছর ধরে চলছে এবং মোট কত কিলোমিটার চালানো হয়েছে তা জানুন।
  • তবে মনে রাখবেন, মাইলেজ কাউন্টার সহজেই পরিবর্তন করা যায়।
  • তাই বাইকের অন্য যান্ত্রিক অংশ এবং বাহ্যিক অবস্থা দিয়েও বোঝার চেষ্টা করুন।

৩. সার্ভিসিং ও ক্ষতির ইতিহাস দেখুন

  • পূর্ববর্তী মালিক বা ডিলার থেকে সার্ভিস রিপোর্ট সংগ্রহ করুন।
  • বড় কোনো যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করুন।
  • বিশেষভাবে কাস্টমাইজড বা একাধিকবার রিপেয়ার করা বাইক থেকে দূরে থাকুন।

৪. টায়ার পরিদর্শন করুন

  • টায়ারের গ্রুভ কতটা পরেছে, তা দেখে বুঝতে পারবেন বাইকটি কতটা চালানো হয়েছে।
  • টায়ার যদি একবার পরিবর্তন করা হয়, তাহলে রিম ও টায়ারের সংযোগস্থল পরীক্ষা করুন।
  • অস্বাভাবিক ফাঁকা বা খারাপ ফিটিং দেখলে বুঝে নিন টায়ার পরিবর্তন করা হয়েছে।

৫. স্প্রকেট পরীক্ষা করুন

  • সামনে ও পেছনের স্প্রকেট দেখুন। এগুলোর গ্রুভ যদি বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তবে বুঝবেন এটি অনেক দূর চালানো হয়েছে।
  • একটি স্প্রকেট ১০-১৫ হাজার কিমি ব্যবহারে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

৬. ব্রেক ডিস্ক ও প্লেট চেক করুন

  • ব্রেক ডিস্কের প্রান্ত থেকে ভেতরে স্পর্শ করে দেখুন, যদি উচ্চতা ধীরে কমে যায় তাহলে বুঝবেন এটি ব্যবহৃত হয়েছে বহুবার।
  • ব্রেক প্যাড না দেখে ডিস্ক চেক করাই ভালো কারণ প্যাড সহজে বদলানো যায়।

৭. ইলেকট্রিক্যাল পার্টস যাচাই করুন

  • হেডলাইট, টেইললাইট, ইন্ডিকেটর, হর্ন, স্টার্ট বাটন ইত্যাদি ভালোভাবে কাজ করছে কিনা পরীক্ষা করুন।
  • বাইকের নির্দিষ্ট মডেলের ইলেকট্রিক ফিচারের একটি চেকলিস্ট নামিয়ে নিন ও একে একে মিলিয়ে দেখুন।

৮. ইঞ্জিন অয়েল ও কুল্যান্ট অবস্থা দেখুন

  • অয়েল যদি কালচে ও ঘন হয় তবে বুঝবেন অনেকদিন পরিবর্তন করা হয়নি।
  • সঠিক অয়েল দেখতে হবে সিরাপের মতো; পরিষ্কার ও মসৃণ।
  • কুল্যান্টেও যদি জলীয় ভাব বা দুধের মতো রঙ থাকে, তবে তা লিকেজের ইঙ্গিত হতে পারে।

৯. বাইকের বাহ্যিক অবস্থা পরীক্ষা করুন

  • হ্যান্ডেল, সিগন্যাল লাইট, শক-অ্যাবজর্বার, সিট কাভার ইত্যাদি খুঁটিয়ে দেখুন।
  • বাইকের চাবি এবং সিটের আসল অবস্থা দেখে বয়স ধারণা করুন।

১০. টেস্ট রাইড দিন

  • বাইক চলতে কেমন লাগে তা না চালিয়ে বোঝা সম্ভব নয়।
  • ব্রেকিং, টার্নিং, ব্যালেন্স এবং কমফোর্ট কেমন তা টেস্ট রাইডেই বুঝে আসবে।

১১. বাজার যাচাই করুন ও তুলনা করুন

  • এক বাইক দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন না।
  • একাধিক বাইক দেখুন, তুলনা করুন, দর-কষাকষি করুন।
  • নির্ভরযোগ্য ডিলার বা অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিন।

ব্যবহৃত মোটরসাইকেল কেনা সহজ নয়, কিন্তু ধৈর্য্য ও কিছু জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা আপনাকে একটি ভালো বাইক এনে দিতে পারে সুলভ মূল্যে। উল্লিখিত প্রতিটি বিষয় খেয়াল রেখে কিনলে দীর্ঘমেয়াদে শান্তিতে চালাতে পারবেন।