সারা দেশে বোরো আবাদের পরিমাণ ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৭ হেক্টর। এর মধ্যে এরই মধ্যে কাটা হয়েছে ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৬১১ হেক্টর যা মোট আবাদের শতকরা ২৫ ভাগ। অন্যদিকে হাওড়ের নিচু এলাকা বা মূল হাওড়ে ৯০ ভাগ ধান কর্তন শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ১০ ভাগ এ সপ্তাহের মধ্যে কাটা সম্পন্ন হবে। আগামী জুন মাসের মধ্যে সারা দেশের বোরো ধান শতভাগ কর্তন সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনলাইনে মতবিনিময়কালে এসব তথ্য দেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
হাওড়সহ সারা দেশের বোরো ধান কর্তনের অগ্রগতি এবং করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে মতবিনিময় করেন মন্ত্রী।
অনলাইন ব্রিফিংয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ প্রমুখ সংযুক্ত ছিলেন।
কৃষিমন্ত্রী জানান, হাওড়াঞ্চলে (হাওড় ও হাওড় সংলগ্ন) মোট বোরো আবাদের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ হেক্টর, এর মধ্যে এ পর্যন্ত মোট কর্তনের পরিমাণ ৬ লাখ ১১ হাজার ৮১৩ হেক্টর যা হাওড়ের জেলাসগুলোর মোট আবাদের শতকরা ৬৫ দশমিক ৩৪ ভাগ। বর্তমানে হাওড়ভুক্ত জেলাগুলোতে ধান কর্তনের জন্য প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ জন কৃষি শ্রমিক নিয়োজিত আছে। সফলভাবে নিরাপদে বোরা ধান দ্রুত কর্তনের জন্য উত্তরাঞ্চলসহ দেশের প্রায় ৪টি কৃষি অঞ্চল থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় এবং সরকার ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় প্রায় ৩৮ হাজার কৃষি শ্রমিককে হাওড়ে পাঠানো হয়েছে। শুধু সুষ্ঠুভাবে ধান কাটা নয়, কৃষকেরা যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পায় সে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে
তিনি আরো জানান, খাদ্য ক্রয় কার্যক্রমকে সুচারূরূপে সম্পাদনের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ধান বিক্রয়কারী কৃষকের তালিকা তৈরি করে তা খাদ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কৃষকের ধান বিক্রয়ে যাতে সুবিধা হয় এজন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে ২ হাজার ২৩২ টি আর্দ্রতামাপক যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে।
বর্তমানের কৃষি উৎপাদনের বর্তমান ধারা শুধু অব্যাহত রাখা এবং তা আরও বৃদ্ধির উদ্যোগের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা ও বিভিন্ন সময়ে দেয়া নির্দেশনা মোতাবেক খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার নিমিত্ত যাতে কোনো জমি পতিত না থাকে এবং আবাদযোগ্য জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় সেজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট মাঠ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং পারিবারিক সবজি বাগান নামে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন।
কৃষিমন্ত্রী এসময় কৃষকদের বাঁচাতে ৪ শতাংশ সুদে শস্য ও ফসলখাতসহ কৃষিখাতে ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রীকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, চলতি আউশ মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যা থেকে মোট উৎপাদন হবে ৩৪ লাখ ৪৪ হাজার ৮০০ টন চাল। এরই মধ্যে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ফসলের (আঊশ, পাট, তিল ও গ্রীষ্মকালীন সবজি) জন্য ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩৪ জন কৃষকের মাঝে মাঝে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া প্রণোদনা অর্থের সহায়তায় ৪১০ দশকি ৮৬ টন আউশ ধানের বীজ কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
ফসলের জাত ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী স্থাপন ও গ্রহণকরণ কার্যক্রমের আওতায় রাজস্ব অর্থায়নে ৭৫ কোটি টাকার কার্যক্রম বাস্তবায়ন চলমান আছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।