বৈশ্বিক গাড়ি শিল্পে ইভি প্রযুক্তির প্রভাব বাড়ছে

বিশ্ব গাড়ি শিল্পের মানচিত্র বদলে দিচ্ছে চীন। একসময় যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি কিংবা জাপানের গাড়ি নির্মাতাদের আধিপত্য ছিল, সেখানে এখন চীনের ইলেকট্রিক ভেহিকল (ইভি) প্রযুক্তি নিয়ে তৈরি হচ্ছে এক নতুন বাস্তবতা।

প্রযুক্তি আর দামের সমন্বয়

ব্যাটারি প্রযুক্তিতে এগিয়ে

ইভি বাজারে সফলতার অন্যতম শর্ত ব্যাটারি প্রযুক্তি। এ ক্ষেত্রে চীন এগিয়ে আছে কয়েক ধাপ। CATL ও BYD-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির পাশাপাশি উন্নত সোডিয়াম-আয়ন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। এ ধরনের ব্যাটারি শুধু বেশি সময় চার্জ ধরে রাখবে না। বরং পরিবেশবান্ধবও হবে। এর ফলে ইউরোপ ও আমেরিকার গাড়ি নির্মাতারা বাধ্য হচ্ছে চীনের ব্যাটারি প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হতে।

বৈশ্বিক বাজারে চীনের অগ্রযাত্রা

ইতোমধ্যেই ইউরোপের সড়কে চীনা ইভির উপস্থিতি দৃশ্যমান। ২০২৩ সালে ইউরোপে বিক্রি হওয়া প্রতিটি পাঁচটি ইভির মধ্যে একটি এসেছে চীন থেকে। এ বছর সেই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো কঠিন প্রতিযোগিতামূলক বাজারেও ঢুকতে শুরু করেছে চীনা ব্র্যান্ড।

শঙ্কা ও চ্যালেঞ্জ

তবে এই সাফল্যের সঙ্গে এসেছে নতুন শঙ্কা। পশ্চিমা নির্মাতারা আশঙ্কা করছে, চীনা ইভির দাম এত কম যে স্থানীয় বাজারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে চীনা ইভির ওপর শুল্ক আরোপ নিয়ে ভাবছে। অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। চীনের ইভি কারখানাগুলোতে ব্যবহৃত শক্তি এখনও বড় অংশে কয়লা থেকে আসে। যা জলবায়ু ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

তবে চীনের এই অগ্রযাত্রা ঠেকানো সহজ নয়। বিশাল উৎপাদন ক্ষমতা, সরকারের সহায়তা এবং ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত দক্ষতা চীনকে বৈশ্বিক ইভি শিল্পে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। বিশ্ব গাড়ি শিল্পে যে পরিবর্তনের ঢেউ উঠেছে, তার কেন্দ্রবিন্দু এখন বেইজিং ও সাংহাই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইভি বিক্রি হবে চীনের তৈরি। আর এই বাস্তবতা হয়তো প্রমাণ করে দেবে- পরবর্তী প্রজন্মের গাড়ি শিল্পের আসল ঠিকানা ‘চায়না ইনসাইড’।